Corona

কারও মাস্ক পকেটে, কেউ ছুটলেন বাড়ি

কৃষ্ণনগর পুরসভার পক্ষ থেকে রবিবার টোটো করে মাইক নিয়ে মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে প্রচার করা হয়।

Advertisement

সুদীপ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২১ ০৫:৫৫
Share:

কারও মুখে মাস্ক নেই, কারও বা নাকের নীচে। রবিবার, পাত্রবাজারে।

রবিবারের সকাল। কৃষ্ণনগরে পাত্রবাজারের সামনের বড় রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে এগিয়ে আসা ছেলেটিকে হাত দেখিয়ে থামান মাঝবয়সী ভদ্রলোক। প্রশ্ন করেন, ‘‘ভাই তোমার মাস্ক কোথায়?’’

Advertisement

একটুও না ঘাবড়ে ছেলেটি পকেট থেকে বহু ব্যবহারে জীর্ণ, রোয়া-ওঠা একখানা সার্জিক্যাল মাস্ক বের করে। সেটা দেখিয়ে বলে, ‘‘এই তো!’’

ও দিকে টোটোয় বসা এক মহিলা মাইকে ক্রমাগত বলে চলেন— ‘‘করোনা ভাইরাস এখন মারাত্মক আকার নিয়েছে। সরকার থেকে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সবাই মাস্ক পরুন।’’ করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে জেরবার প্রশাসন যে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছে এবং না পরলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে, তা অনেকেই শুনেছেন। দিন কয়েক ধরে কৃষ্ণনগরে মাস্ক না পরায় পুলিশ বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেককে গ্রেফতার করেছে, সে খবরও চাউর হয়েছে শহরে। সেই ভয়ে কেউ কেউ মাস্ক পরছেন। অন্তত সঙ্গে রাখছেন! রবিবার কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘মাস্ক না পরার জন্য এলাকায় শনিবার পর্যন্ত ১১ জন গ্রেফতার হয়েছেন। অভিযান চলছে। পাশাপাশি চলছে সচেতনতার প্রচার।’’

Advertisement

কৃষ্ণনগর পরিবেশ বন্ধুর সদস্যেরা এলাকার মানুষকে মাস্ক পরা নিয়ে সচেতন করতে রবিবার পথে নেমেছিলেন। কিন্তু মানুষ কতটা সচেতন হচ্ছেন বা হয়েছেন, তার নমুনা পাওয়া গেল বাজারে ঢুকেই। এখানে অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গেই মাস্ক আছে, কিন্তু ঠিক ভাবে তা পরেননি অনেকেই। কারও মাস্ক থুতনির নীচে, কারও মাস্ক ঝুলছে গলায়, আবার কারও বা সোজা পকেটে। প্রশাসনের নির্দেশের পরেও এ ভাবে মাস্ক পরার কারণ?

কারও সাফাই— ‘‘হাঁফ লেগে যাচ্ছে যে।’’ কেউ আবার বললেন, ‘‘এই মাত্র খুললাম একটা বিড়ি খাব বলে।’’ পাত্র বাজারে ধুবুলিয়া থেকে আসা এক ফল-বিক্রেতা শ্যাম ঘোষকে আবার দেখা গেল একটা রাজনৈতিক দলের ছেঁড়া পতাকা মুখে বেঁধে রেখেছেন মাস্কের মতো করে। কারণ জিগ্যেস করতে শ্যামের জবাব, ‘‘মাস্কের ফিতেটা ছিঁড়ে গেছিল। এটা পেলাম। মুখে বেঁধে নিলাম।’’ করোনা সংক্রমণ রুখতে মাস্কের শুদ্ধিকরণটাও যে ভীষণ জরুরি, সেটা মাথায় রাখছেন না অনেকেই। হাত স্যানিটাইজ় না করেই কেউ কেউ বারবার মাস্ক খোলা-পরা করছেন। ফলে, এতে করোনা ভাইরাস কতটা রুখছে, দেবা ন জানন্তি!

মহিলাদের অনেককেই দেখা গেল মাস্কের বদলে রুমাল বা শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ ঢাকছেন। আবার পুরুষদের কেউ মুখে বেঁধে নিচ্ছেন বারবার হাত দিয়ে ধরা, ব্যবহার করা কাপড়ের গামছা। কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যান্ডে মুখে রুমাল বাঁধা এক টোটোচালককে মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে বললেন, ‘‘আজকাল এটাই চলছে বাজারে।’’ সচেতন টোটোচালকও রয়েছেন কেউ কেউ। যেমন সুমন দাস। তিনি বলেন, ‘‘মাস্ক পরে থাকা ছাড়া প্যাসেঞ্জার তুলি না।’’

রবিবার ফাঁড়ির মোড়ে দেখা গেল, জনা পাঁচেক ব্যক্তি মাস্ক ছাড়াই খুব কাছাকাছি বসে গল্প করছেন। জিগ্যেস করা গেল— বাইরে বেরলে মাস্ক পরতেই হবে— এই সরকারি নির্দেশ জানেন? সে কথা শোনামাত্র তড়িঘড়ি পকেট থেকে মাস্ক বের করে পরে নিলেন এক জন। আর অন্য এক জনের মন্তব্য— ‘‘বাড়িতে আছে, নিয়ে আসি।’’

তবে বেপরোয়া মানুষেরও অভাব নেই। তাঁদের কেউ কেউ যেমন বললেন, ‘‘আমায় কেউ মাস্ক পরাতে পারবে না।’’ কিংবা ‘‘আমি কী পরব, আমার ব্যাপার।’’ সেটা শুনে পাশ জনৈক শহরবাসীর মন্তব্য— ‘‘পুলিশের মার তো খাওনি। খেলে বুঝবে। তখন মাস্কও পরবে!’’

এ দিন কিছু দোকানিকেও দেখা গেল মাস্ক পরিহিত অবস্থায়। কেউ কেউ আবার পরেননি। এই প্রসঙ্গে নদিয়া ডিস্ট্রিক চেম্বার অফ কমার্স ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ট্রেডের যুগ্ম সম্পাদক গোকুলবিহারী সাহা বলেন, ‘‘প্রতিটা দোকানে আমরা জানিয়ে দিয়েছি বিক্রেতাকে মাস্ক পরতে হবে। মাস্ক ছাড়া ক্রেতাকে জিনিস দিতেও বারণ করে দেওয়া হয়েছে।’’ যদি এই নির্দেশ পালন না করা হয় তবে সংগঠনের তরফে বিক্রেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

অন্য দিকে, কৃষ্ণনগর পুরসভার পক্ষ থেকে রবিবার টোটো করে মাইক নিয়ে মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে প্রচার করা হয়। কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক তথা পৌর প্রশাসক মণ্ডলীর সভাপতি চিত্রদ্বীপ সেন বলেন, ‘‘আমরা প্রশাসন ও পৌর প্রশাসনের তরফে মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যপারে প্রচার করছি। এর পরেও কেউ সেগুলো না মানলে আগামী দিনে আইনমাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement