করোনাজয়ীদের সংবর্ধনা হরিহরপাড়ার শ্রীপুর গ্রামে। নিজস্ব চিত্র।
জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ভিন রাজ্য থেকে ঘরে ফেরা এক পরিযায়ী শ্রমিকের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। পরে ওই পরিবারের তিন জন-সহ গ্রামের মোট পাঁচজন করোনায় আক্রান্ত হন। প্রশাসনের তরফে শ্রীপুর নামুপাড়া গ্রামকে ‘কনটেনমেন্ট জ়োন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল এরপর। বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয় গ্রাম। হাসপাতালে চিকিৎসার পর একে একে সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরেন করোনা আক্রান্তরা। কিন্তু অভিযোগ, সুস্থ হওয়ার পরেও গ্রামের একদল মানুষ তাঁদের ‘একঘরে’ করে রেখেছিলেন। তাঁদের বাড়িতে যাওয়া, মেলামেশাও সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করে দেন গ্রামের অধিকাংশ মানুষ। ঘটনার কথা জানতে পেরেই গ্রামে যান প্রশাসনের কর্তারা ও জেলার ‘কোভিড ওয়ারিয়র্স’ ক্লাবের সদস্যরা। তারপর কেটে গিয়েছে প্রায় দেড় মাস। তবুও অনেক পরিবারের কাছেই এখনও ‘ব্রাত্য’ হয়েই রয়েছেন করোনাজয়ীরা।
ইতিমধ্যে দুই করোনাজয়ী যোগ দিয়েছেন ‘কোভিড ওয়ারিয়র্স’ ক্লাবে। তাঁরা কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা আক্রান্তদের মনোবল বাড়ানোর কাজ করছেন। তবে এখনও তাঁদের নিজেদের পরিবারের লোকজনই গ্রামের একাংশের কাছে ‘ব্রাত্য’ হয়ে রয়েছেন বলে অভিযোগ। এবার সচেতনতার অভাব থাকা সেই সব গ্রামবাসীদের বোঝাতে ফের গ্রামে গেলেন প্রশাসনের কর্তারা। তবে করোনাজয়ীরা পাশে পেয়েছেন গ্রামের বেশ কিছু সচেতন মানুষকেও। মঙ্গলবার শ্রীপুর গ্রামের কয়েক জন যুবা গ্রামে করোনাজয়ীদের সংবর্ধনা দিয়েছেন। তাঁদের ফুল ও স্মারক দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।আয়োজকদের তরফে মতিউর রহমান বলেন, ‘‘করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর সেই ব্যক্তির মাধ্যমে করোনা ছড়ায় না। এটা গ্রামের মানুষ বুঝতে চাইছেন না। তাঁদের সচেতন করতেই করোনাজয়ীদের সংবর্ধনা দেওয়া হল।’’ ওই গ্রামের করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর গ্রামবাসীদের একাংশ কার্যত আমাদের একঘরে করতে শুরু করেছিলেন। হীনম্মন্যতায় ভুগছিলাম। তবে আজ বুঝলাম, অধিকাংশ মানুষই আমাদের পাশে।’’ হরিহরপাড়ার বিডিও পূর্ণেন্দু স্যানাল বলেন, ‘‘আমাদের লড়াই করোনা অতিমারির বিরুদ্ধে। এ জন্য সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন হতে হবে। গ্রামের কেউ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তি,পরিবারকে যাতে ব্রাত্য করে না রাখেন সেটাই বোঝানো হয়েছে।’’