প্রতীকী ছবি।
করোনা পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করছে মুর্শিদাবাদে। গত ৪৮ ঘণ্টায় মুর্শিদাবাদে করোনায় ১৬ জনের করোনায় মত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকাল সাতটা থেকে শনিবার ৭টা পর্যন্ত জেলায় ৭জনের মত্যু হয়েছে। আবার শনিবার সকাল সাতটা থেকে রবিবার সকাল সাতটা পর্যন্ত ৮ জনের করোনায় মৃত্যু হয়েছে বলে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। এছাড়া শনিবার রাতে ফরাক্কার ইমামনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার করোনা আক্রান্ত এক প্রৌঢ়ার মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে।
করোনায় শুধু মৃত্যুই নয়, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। শনিবার জেলায় ২৫৭ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে করোনা হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলি ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের সারি ওয়ার্ডে ভিড় উপচে পড়ছে। ফলে সাধারণ ওয়ার্ডেও করোনা সন্দেহে রোগী ভর্তি রাখতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত আরও একটি সারি ওয়ার্ড তৈরির কাজ শুরু করেছে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, জেলায় মোট ১৪হাজার ৪৬৪জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়েছেন ১২হাজার ৮১২জন। করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১৬৬জনের। এই মুহুর্তে জেলায় ১৪৯১জন অ্যাক্টিভ রোগী রয়েছেন।
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমএসভিপি অমিয়কুমার বেরা বলেন, ‘‘শুক্রবার সকাল সাতটা থেকে রবিবার সকাল সাতটা পর্যন্ত করোনা হাসপাতালে ১৫জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, মৃতদের অধিকাংশের কো-মর্বিডিটি ছিল। এছাড়া অনেকেই শেষ মূহুর্তে হাসপাতালে এসেছেন। ফলে চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা করা যায়নি। তবে ওই মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে পাঁচজনের রিভিউ কমিটি গঠন করা হয়েছে।’’
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতদের বাড়ি রঘুনাথগঞ্জ, ফরাক্কা, সুতি-২ব্লক, সাগরদিঘি, খড়গ্রাম, বহরমপুর এলাকায়। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রের খবর, এবারে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা জঙ্গিপুর মহকুমায় বেশি।
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার বিকেল পর্যন্ত মাতৃসদন করোনা হাসপাতালে ১১২ জন ভর্তি রয়েছেন। এছাড়া মাতৃমাতে করোনা আক্রান্ত দুই প্রসূতি এবং মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এসএনসিইউতে করোনা আক্রান্ত এক সদ্যোজাত ভর্তি রয়েছে।
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সূত্রের খবর, ওই সদ্যোজাতের মা-ও করোনা পজ়িটিভ। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ২৬ শয্যার সারি ওয়ার্ড রয়েছে। সেখানে ২৬ জন ভর্তি রয়েছে। এছাড়া সাধারণ ওয়ার্ডে করোনার উপসর্গ নিয়ে ৪৩ জন ভর্তি রয়েছে।
অন্যদিকে করোনা সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও পর্যাপ্ত প্রতিষেধক নেই। যার জেরে সমস্যায় মুর্শিদাবাদের বাসিন্দারা। করোনার প্রতিষেধক পর্যাপ্ত না আসার দায় কেন্দ্রকে চাপিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
রবিবার বিকেলে বহরমপুরে জেলা পার্টি অফিসে সাংবাদিক বৈঠক করে জেলা তৃণমূল সভাপতি আবু তাহের খান বলেন, ‘‘লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা। কিন্তু সেই করোনা নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্র পর্যাপ্ত প্রতিষেধক পাঠাচ্ছে না। এর জন্য প্রধানমন্ত্রী দায়ি। তিনি করোনা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা না করে রাজ্য দখলের আসায় এখানে পড়ে আছেন। তিনি ও তাঁর দলের নেতারা করোনা বিধি মানছেন না। যার জেরে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে।’’ তবে বিজেপির জেলার সাধারণ সম্পাদক তপন চন্দ্র বলছেন, ‘‘আমরা বিধি মেনে সভা-মিছিল করছি। বরং তৃণমূল বিধি মানছে না।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, জেলায় এখনও পর্যন্ত ৫ লক্ষ ২০ হাজার করোনার প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে।
গত দশ দিন থেকে জেলায় করোনার প্রতিষেধকে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যেখানে দৈনিক ২৫-৩০ হাজার করোনার প্রতিষেধক দেওয়ার পরিকাঠামো রয়েছে, সেখানে গত ১০ দিনের জন্য মাত্র ৪০হাজার প্রতিষেধক এসেছে। যার জেরে যোগ্য সকলকে প্রতিষেধক দেওয়া যাচ্ছে না। মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরা জেনেছি দিল্লি থেকে পর্যাপ্ত প্রতিষেধক রাজ্যে আসেনি। ফলে রাজ্য থেকেও পর্যাপ্ত প্রতিষেধক জেলায় পাঠাতে পারেনি।’’