প্রতীকী ছবি
করোনা-আবহে লকডাউনের জেরে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতে পারছেন না। কারণ যানবাহন চলছে না। ট্রেন, বাস, টোটো সবই বন্ধ। সকলের পক্ষে সব সময় অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব নয়।
এই রকম পরিস্থিতিতে চিকিৎসার জন্য কার্যত অনেকেই পুরোপুরি এলাকার গ্রামীণ চিকিৎসকের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। তাঁদের চেম্বারে ভিড় বাড়ছে।
আবার কিছু গ্রামীণ চিকিৎসক করোনা-সংক্রমণের ভয়ে চেম্বার বন্ধ করতে চাইলেও স্থানীয় মানুষের চাপে তা করতে পারছেন না। অনেক গ্রামীণ চিকিৎসক আবার অনুযোগ করছেন, সরকার তাঁদের পরিষেবা চালিয়ে যেতে বলছেন। এ দিকে, তাঁরা নিরাপত্তার জন্য পিপিই কিট বা মাস্ক কিছুই পাননি। তাঁদের বিমার আওতাতেও আনা হয়নি। তা হলে কীসের ভরসায় তাঁরা চিকিৎসা করবেন?
অন্য দিকে, গ্রামের সাধারণ মানুষের মতে, যানবাহনের অভাবে এখন দূরে বড় হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব নয়। এই সমস্যার সময়ে গ্রামীণ চিকিৎসকেরা যদি তাঁদের পাশে না দাঁড়ান তা হলে আর কখন দাঁড়াবেন। তা ছাড়া, এত দিন এই গ্রামের মানুষের জন্যই তো গ্রামীণ চিকিৎসকেরা কিছু করে খেতে পেয়েছেন। এখন তার কিছু প্রতিদান দেওয়া কর্তব্য।
কিছু দিন আগেও করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে গড়ে দেড়শোর বেশি রোগী ভর্তি থাকতেন। হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসার জন্য প্রতিদিন প্রায় আটশো রোগী ভিড় করতেন। এখন সেখানে প্রতিদিন মেরেকেটে গড়ে দশ জন ভর্তি হচ্ছেন। মানিকনগরের উত্তম মণ্ডল জানান, সীমান্তবর্তী এক একটি গ্রাম থেকে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় পনেরো-কুড়ি কিলোমিটার। এঁদের পক্ষে এখন হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই প্রায় সবাই গ্রামীণ চিকিৎসকের কাছে ছুটছেন। অনেকে আবার মনে করছেন, হাসপাতাল গেলে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকবে। তুলনায় গ্রামীণ চিকিৎসকের কাছে যাওয়াটা নিরাপদ। রঘুনাথপুরের সঞ্জিৎ দত্ত যেমন বলেন, এই পরিস্থিতিতে গ্রামীণ চিকিৎসকের জন্য প্রত্যন্ত এলাকার মানুষগুলো বেঁচে গেলেন।
করিমপুর হাসপাতাল ছাড়াও বহু ওষুধের দোকানে ডাক্তারেরা রোগী দেখতেন। অনেক লাইসেন্সপ্রাপ্ত ডাক্তারের নিজস্ব চেম্বারও ছিল। কিন্তু লকডাউনের ফলে সে সব বন্ধ। ওষুধের দোকান খোলা থাকলেও চিকিৎসকেরা বসছেন না। এই রকম অবস্থায় অনেকেরই শেষ ভরসা গ্রামীণ চিকিৎসকেরা। হোগলবেড়িয়ার কোয়াক ডাক্তার রমেন্দ্রনাথ মজুমদার কথায়, “এখন বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বহু রোগী আমাদের কাছে আসছেন। তেমন কোনও উপসর্গ দেখলেই স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”
করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের সুপার মণীষা মণ্ডল জানান, এই লকডাউনে জেলা সীমানা বন্ধ থাকায় মুর্শিদাবাদের একটা বিরাট অংশের রোগী আসতে পারছেন না। ছোটখাট শারীরিক সমস্যায় এলাকার ২৭টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মীদের কাছে গেলেই ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।