প্রতীকী ছবি
করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের যে বিশেষ পোশাক দরকার তার নাম ‘পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইক্যুপমেন্ট’ বা পিপিই। জেলায় যদিও এখনও পর্যন্ত সেই পোশাক চাহিদার তুলনায় কম রয়েছে। অভাব মেটাতে এবার জেলাতেই স্বনির্ভরগোষ্ঠীর মহিলাদের দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে পিপিই।
স্বনিযুক্তি প্রকল্পে তৈরি করা এই পিপিই-র মান ঠিক হচ্ছে কিনা দেখে নিতে জেলার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে একটি বিশেষ কমিটি গঠিত হয়েছিল। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, সেই কমিটির অনুমোদন দেওয়ার পরই ওই গোষ্ঠীকে তিন হাজার পিপিই তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছে।
জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘আমাদের কাছে যা পিপিই আছে তা এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট। কিন্তু হঠাৎ যদি জেলায় একসঙ্গে অনেক বেশি করোনা আক্রান্তের খোঁজ মেলে সেই পরিস্থিতির কথা ভেবে পিপিই তৈরি করে রাখার কথা ভাবা হয়েছে।’’ এই জেলারই পলাশিপাড়ার বার্নিয়ার শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামে দিল্লি থেকে আসা পাঁচ জনের দেহে করোনা সংক্রামিত হয়েছিল। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত আর কেই আক্রান্ত হননি। তবে প্রতিদিনই আইসোলেশন ওয়ার্ডগুলিতে সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা ভর্তি হচ্ছেন। তাঁদের চিকিৎসার জন্যও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে প্রয়োজন হচ্ছে পিপিই।
লকডাউন শুরু হওয়ার দু’-এক দিনের মধ্যে জেলাশাসকের হাতে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দেওয়ার জন্য এক লক্ষ টাকা দান করতে আসেন কৃষ্ণনগরের কাছেই সুবর্ণবিহার কৃষি সমবায় উন্নয়ণ সমিতি লিমিটেড’-এর কর্তারা। সংস্থাটির জেলায় রেডিমেড বস্ত্র তৈরির করার ক্ষেত্রে সুনাম আছে। জেলাশাসকই প্রথম তাঁদের পিপিই বানিয়ে দেওয়ার কথা বলেন।
জেলাশাসক বিভু গোয়েল বলেন, ‘‘সিএমওএচ-এর টিম ওই পিপিই-র মান সঠিক বলে জানিয়েছে। এ বার রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের অনুমোদন পেলেই আমরা ওই পিপিই ব্যবহার করা শুরু করব।’’ ওই সমিতির ডিরেক্টর জয়দীপ মিত্র বলছেন, ‘‘জেলাশাসক আমাদের সাহস যোগান। জানান, এটা করতে যেটুকু সহযোগিতা প্রয়োজন সবটাই তাঁরা দেবেন। শেষ পর্যন্ত সাহস করে আমরা রাজিও হয়ে যাই।’’
জেলা প্রশাসন কাঁচামাল কিনে দেয়। লকডাউনের মধ্যেও পিপিই তৈরির প্রধান উপকরণ ‘পলি প্রোপাইলিন নন ওভেন ফেব্রিক’ জোগাড় করা হয়। এটা দিয়েই তৈরি হচ্ছে গাউন, মাস্ক, সু-কভার ও হেড ক্যাপ। কলকাতা থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে প্লাভস আর মুম্বই থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে উন্নত মানের লিকুইড প্রুফ চশমা। ৮ এপ্রিল চূড়ান্ত বরাত পাওয়ার পর কাজ পুরোদমে শুরু হয়। এরই মধ্যে এক হাজার পিপিই তৈরি হয়ে গিয়েছে।
সংস্থার দাবি, সোমবারই মুম্বইয়ের সংস্থাটি ৭০০ চশমা ক্যুরিয়র করেছে। দু’দি দিনের মধ্যে তা এসে যাবে। বাকি ২৩০০ চশমা বৃহস্পতিবার ক্যুরিয়ার করে দেওয়া হবে বলে মুম্বইয়ের ওই সংস্থা জানিয়েছে। জয়দীপবাবু বলেন, ‘‘আমরা বাজারের থেকে অনেক কম দামে পিপিই দেব। আমরা মানবজাতীর এই বিপর্যয়ের দিনে আমরা কোন লাভ রাখছি না।’’