ছবি পিটিআই।
দিন কয়েক আগেই গোয়া থেকে জ্বর গায়ে ফিরেছিলেন দেবগ্রামের এক যুবক। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরীক্ষাও করিয়েছিলেন। তবে জ্বর ছাড়া আর কোনও লক্ষণ তখনও ছিল না। চিকিৎসক বলেছিলেন, টাইফয়েড হয়ে থাকতে পারে। তবে ১৪ দিন তাঁকে হোম কোয়রান্টিনে থাকতে বলা হয়।
বৃহস্পতিবার বিকেলে কালীগঞ্জের বিএমওএইচ তিমিরকান্তি ভদ্র জানান, বুধবার রাত থেকে ওই যুবকের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিল। খবর পেয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে এনে ভর্তি করেছেন। প্রাথমিক ভাবে জানা যাচ্ছে, ওই যুবককে ঘরে থাকতে বলা হলেও তিনি তা মানেননি। গ্রামের কলে স্নান করেছেন, দোকান-বাজার গিয়েছেন। গ্রামের লোক নিষেধ কানে তোলেননি। ফলে চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা।
বুধবার থেকেই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে হোম কোয়রান্টিনে থাকা কোনও কোনও পরিযায়ী শ্রমিকের জ্বরের খবর আসতে শুরু করেছে। যেহেতু তাঁরা কেরল, মুম্বই, চেন্নাই, পুণে বা দিল্লি থেকে শুক্রবার বা শনিবার রওনা দিয়েছিলেন, ফলে এক সপ্তাহ পূর্ণ হতে চলেছে। কেউ করোনাভাইরাস শরীরে নিয়ে এলে এখনই লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করার কথা। কালীগঞ্জের যুবক অসুস্থ হওয়ার পরে আরও সতর্ক নজরদারি করতে বলা হয়েছে আশাকর্মীদের। তেহট্টের যে ১৩ জনকে বুধবার আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছিল, তাঁদের আট জনের রোগলক্ষণ থাকায় লালারস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। বাকিদের আলাদা ভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
রবিবার থেকেই ভিন্ রাজ্যে থাকা শ্রমিকদের দলে-দলে ঘরে ফেরা শুরু হয়েছিল। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত তাঁরা ফিরেছেন এবং ছড়িয়ে গিয়েছেন নানা প্রান্তে। আশাকর্মী, এএনএম এবং পঞ্চায়েত সদস্যেরা মিলে তাঁদের চিহ্নিত করে তালিকা তৈরি করেছেন। সেই তালিকা অনুযায়ী সংখ্যাটা প্রায় ১৬ হাজার। এঁদের একাংশও যদি করোনা সঙ্গে করে এনে থাকেন, পরিস্থিতি ঘোরালো হতে পারে। প্রশ্ন হল, তা মোকাবিলা করার জন্য কতটা প্রস্তুত নদিয়া? সাধারণ সময়েই প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক ও নার্স কম থাকে। এখন জেলায় সাতটি আইসোলেশন সেন্টারে ৬৪টি শয্যা, ছ’টি কোয়রান্টিন সেন্টারে ৪০৬টি শয্যা। কর্তারা বলছেন, এখনও পর্যন্ত যা অবস্থা তাতে চিকিৎসক ও নার্সেরা সামাল দিতে পারবেন। কিন্তু যদি রোগীর সংখ্যা হঠাৎ করে অস্বাভাবিক বেড়ে যায়, পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে।
ইতিমধ্যেই জেলা হাসপাতালে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের মতো পরিকাঠামো তৈরি করার নির্দেশ এসেছে রাজ্য থেকে। দ্রুত তা তৈরি করতে হবে বলে স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন জেলা হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা। কারণ বর্তমানে জেলা হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসক আছেন মোটে সাত জন। আইসোলেশন ও কোয়রান্টিন সেন্টার সামলে নতুন পরিকাঠামো সামলানো তাঁদের পক্ষে কঠিন হবে। সে ক্ষেত্রে গ্রামীণ ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে মেডিসিনের চিকিৎসকদের নিয়ে এসে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হবে বলে স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন।
জেলার এক কর্তার কথায়, ঠিক কী পরিস্থিতি তৈরি হতে চলেছে তা কারও কাছেই পরিষ্কার নয়। ফলে তাঁরা চেষ্টা করছেন পরিকাঠামো যতটা সম্ভব তৈরি করে রাখতে। জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত দেওয়ান বলেন, “দিনের পর দিন ভয়ঙ্কর চাপ নিয়ে কাজ করতে-করতে অনেকেই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়তে পারেন। সেই কারণে আমরা তাঁদের থাকা-খাওয়া এবং যাতায়াতের যাবতীয় দায়িত্ব নিচ্ছি। মানসিক চাপ কমাতে এক দিন অন্তর ডিউটি দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
এই তালিকায় যেমন চিকিৎসকেরা আছেন, তেমনই আছেন নার্স, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, সাফাইকর্মী এবং অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরাও। রাজ্য প্রয়োজনীয় ওষুধের সরবরাহ অব্যাহত রাখতে পারবে বলেই তাঁদের আশা। তবে এখনও এন৯৫ মাস্কের জোগান পর্যাপ্ত নয় বলেই স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে।
নবান্নের নির্দেস মেনে ভবঘুরেদের জন্যও বিশেষ পদক্ষেপ করতে চলেছে জেলা প্রশাসন। এ দিনই জেলাশাসক বিভু গোয়েল সমস্ত থানার ওসি, আইসি ও বিডিও-দের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্স করে ভবঘুরে ও ভিখারিদের চিহ্নিত করে খাবারের ব্যবস্থা ও প্রয়োজনে অস্থায়ী শিবির করতে বলেছেন। জেলাশাসক বলেন, “যে যেখানে রাতে থাকেন, সেখানেই থাকার ব্যবস্থা করা হবে।”