প্রতীকী ছবি।
করোনার চেয়েও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে করোনা-গুজব।
দিন কয়েক আগে, জেলার প্রথম করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধের ‘মৃত্যু’ হয়েছে বলে রটনা তাঁর পরিবারে কান্নার রোল তুলেছিল। এ বার সেই গুজবের তালিকায় যোগ হল এক মিষ্টি বিক্রেতাকে করোনা আক্রান্ত বলে রটিয়ে দিয়ে তাঁকে সপরিবারে প্রায় কোয়রান্টিনে পাঠানোর ব্যবস্থা করা!
দিন কয়েক আগে হোয়াট্সঅ্যাপে এক মহিলা কণ্ঠের অডিও বার্তায় রটানো হয়, বহরমপুরের হরিদাসমাটির ওই মিষ্টি কারবারি করোনা আক্রান্ত এবং তাঁর দোকানটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রটানো হয়, তাঁর পরিবারের লোকজনকেও কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে। পাড়া পড়শি থেকে গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য পঞ্চায়েত প্রধান সটান চলে যান তাঁর বাড়িতে সরেজমিন তদন্তে। রীতিমতো ধমকধামক দিয়ে তাঁকে কোয়রান্টিনে যেতে বলা হয়। আকাশ থেকে পড়েন সেই মিষ্টি-কারবারি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দিন কয়েক আগে কান্দি এলাকা থেকে তাঁর দুই আত্মীয় বাড়িতে এসেছিলেন। তার জেরেই রটানো হয়, করোনার ‘বাহক’ ওই দুই আত্মীয়ের মাধ্যমেই ওই মিষ্টি বিক্রেতাও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
সোমবার ওই মিষ্টি বিক্রেতা বলেন, “চিকিৎসা করাতে আমার দুই আত্মীয় এসেছিলেন বাড়িতে। তা থেকেই করোনা আতঙ্কের সূত্রপাত। আর তার পরেই পাড়া-পড়শি থেকে প্রধান সকলেই বাড়িতে এসে কড়া গলায় জানিয়ে গিয়েছেন, বাড়িতে থাকতে হবে ১৪ দিন।’’ তাঁর প্রতিবেশী সুমন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওঁদের বাড়ির কারও না আছে কাশি না জ্বর। কোথা থেকে কে গুজব রটিয়ে দিল জানি না, ওঁর রোজগারই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।”
জেলা পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার সোমবার বলেন, “যে মহিলা ওই অডিও বার্তা পাঠিয়েছেন তাঁকে খোঁজা হচ্ছে। প্রয়োজনে তাঁকে জেরা করা হবে।” এই অডিও ছাড়াও যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় এই সংক্রান্ত ভুয়ো পোস্ট করেছিল তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে মুচলেকা আদায় করাও শুরু করেছে বহরমপুর থানার পুলিশ।
গুজবের এই তালিকায় শেষ সংযোজন, নওদার কেদারচাঁদপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘোড়ামারা গ্রামের মধ্য পঞ্চাশের এক ব্যক্তি। প্রায় ছ’বছর ধরে তিনি সপরিবারে বেলঘরিয়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় থাকতেন। বছরে দু’-একবার গ্রামের বাড়িতে আসা। দিন কয়েক আগে কলকাতার সেই উপকণ্ঠ থেকে তিনি ঘরে ফেরার পরে রটে যায় তাঁদের শরীরে করোনা সংক্রমণ রয়েছে। গ্রামে ঢুকতে গেলেই বাধা দেওয়া হয়। বাধা দেয় গ্রামবাসীদের একাংশ। রাতটা কোনওক্রমে পড়শি গ্রামে আত্মীয়ের বাড়ি কাটিয়ে প্রশাসনের কাছে নালিশ জানান বেলঘরিয়া ফেরত ওই ব্যক্তি। কিন্তু ফল হয় উল্টো। সকাল থেকে তাঁদের গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া শুরু হয়। খবর পেয়ে প্রশাসনের কর্তারা নওদা পঞ্চায়েত সমিতির একটি নবনির্মিত ঘরে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করেন। পরে হোম কোয়রান্টিনে থাকার শর্তে গ্রামে ঢুকতে পারেন তাঁরা। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলছেন, ‘‘যত না করোনা তার চেয়ে বেশি রটনা!’’