চৈতন্য-মূর্তি: রং বদল করার পরে (বাঁ দিকে)। আগের রং ( ডান দিকে)। নবদ্বীপে গৌরাঙ্গ সেতুতে। সোমবার। ছবি: প্রণব দেবনাথ
নবদ্বীপের গৌরাঙ্গ সেতুর প্রান্তে শ্রীচৈতন্য মূর্তি গেরুয়া রঙে রাঙানো নিয়ে দিনভর নানা রকম প্রচার চলল সমাজমাধ্যমে।
ওই মূর্তির এখনকার এবং আগের ছবি পাশাপাশি দিয়ে লেখা হয়— ‘নবদ্বীপে শ্রীগৌরাঙ্গের মূর্তিতে গেরুয়া রং লাগিয়ে কালিমালিপ্ত করল হিন্দুত্বের ধ্বজাধারীরা’, ‘বাংলার সংস্কৃতি নাকি এরাই রক্ষা করবে’। যদিও এই রং বদলের পিছনে বিজেপি বা অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের হাত থাকার প্রমাণ সোমবার রাত পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
চৈতন্যভূমি থেকে ‘পরিবর্তন যাত্রা’ শুরু করে বিজেপি যে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করেছে, তারই জের টেনে পরের দিন শ্রীচৈতন্যকে আঁকড়ে রাজনীতি করতে নেমেছে তৃণমূলও। রবিবার তৃণমূলের সৌগত রায়, কুণাল ঘোষেরা সভা করে দাবি করেছেন, মহাপ্রভুর ছবি সভাস্থলে না রেখে তাঁকে অপমান করেছে বিজেপি। এরই মধ্যে এ দিন সমাজমাধ্যমে এই পোস্ট। তৃণমূলের একাংশের দাবি, এর পিছনে রয়েছে বিজেপি। আবার বিজেপির পাল্টা দাবি, তৃণমূলই কৌশলে এই ঘটনা ঘটিয়ে তাদের উপরে দায় চাপাতে চাইছে। প্রশ্ন হল, অত উঁচু এবং বড় একটি মূর্তি কি রাতারাতি এমন সুচারু ভাবে রং করে ফেলতে পারেন কোনও দলের কর্মীরা? না কি এটা কোনও সরকারি দফতরের কাজ? নবদ্বীপ পুরসভার একটি সূত্রের দাবি, পূর্ত দফতরের (সড়ক) তত্ত্বাবধানেই এই রংবদল করা হয়েছে। যদিও পূর্ত দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (হাইওয়ে রোডস) শেখর দে সরকার এই নিয়ে কোনও প্রশ্নের সদুত্তর দিতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, “আমাকে এই প্রশ্ন করছেন কেন? এখন ব্যস্ত আছি।” তার পরে যত বার তাঁকে ফোন করা হয়েছে, হয় তিনি তা কেটে দিয়েছেন অথবা তাঁর ফোনই পাওয়া যায়নি। এ প্রসঙ্গে নবদ্বীপের পুর প্রশাসক তথা তৃণমূলের নদিয়া জেলার সাধারণ সম্পাদক বিমানকৃষ্ণ সাহার বক্তব্য, “পূর্ত দফতর যদি চৈতন্য মূর্তির রং বদল করে থাকে, মোটেই সেটা ঠিক হয়নি। ঐতিহ্যবাহী মূর্তিটিকে একটি বিশেষ রঙে রঙিন করে তোলার তীব্র নিন্দা করছি। অত্যন্ত গর্হিত কাজ।” তবে চৈতন্য জন্মস্থান আশ্রম, গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজ, দেবানন্দ গৌড়ীয় মঠ বা নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদের তরফে জানানো হয়েছে, মহাপ্রভুকে সন্ন্যাসের গেরুয়া রঙে রাঙানোর মধ্যে তাঁরা গর্হিত কিছু দেখছেন না।