তৃণমূল নেতা সৌমিক হোসেন।
যেমনটা ছকা ছিল, হুবহু তা-ই হল।
বিধানসভা ভোটে বহু চেষ্টা করেও জয় হাসিল করতে পারেননি তৃণমূল নেতা সৌমিক হোসেন। শেষ পর্যন্ত ডোমকল কব্জায় এল তাঁর।
হোক না শুধু পুরসভা, নিষ্কণ্টক তো বটে! ভোটের ফলাফল হোক না ১৮-৩, ঘোড়া বেচাকেনার পরে তা যে ২১-০। নিষ্কণ্টক!
অতএব খোশমেজাজেই শুক্রবার ডোমকলের প্রথম পুরপ্রধান হিসেবে শপথ নিলেন সৌমিক। প্রশাসনিক ভবনে মহকুমাশাসক তাহিরুজ্জামান তাঁকে এবং বাকি কাউন্সিলরদের শপথবাক্য পাঠ করান। পুরপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করা হয় সৌমিকের নাম। পরে ব্রিজ মোড়ের কাছে তৃণমূলের তরফে একটি অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।
সৌমিক তো পুরপ্রধান হলেন। অন্য কুর্সিগুলো পাবে কে?
তৃণমূলের অন্দরে জোর খবর, দু’নম্বর জায়গাটা নাচছে ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর টুলুয়ারা বিবির কপালে। এখনও খাতায়-কলমে কিছু হয়নি। কিন্তু উপ-পুরপ্রধান হওয়ার দৌড়ে টুলুয়ারা যে এগিয়ে, তা নিয়ে কারও সন্দেহ নেই। এক সময়ে স্থানীয় জিতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন তিনি। পিছনে ছিল দীর্ঘতর ছায়া। সে ছায়ার নাম কামরুজ্জামান।
গত বিধানসভা নির্বাচনের পরে ডোমকল তথা মুর্শিদাবাদে সৌমিকের চেয়েও বেশি আলোচিত নাম ছিল কামরুজ্জামান ওরফে কামরু। একদা সৌমিকের অতি ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত কামরুর নাম জড়িয়েছিল ভোটের দিন বুথের সামনে বোমা মেরে সিপিএম কর্মী তহিদুল ইসলাম খুনের ঘটনায়। কামরু অবশ্য গ্রেফতার হননি। তিনি ‘ফেরার’ হয়ে যান। ওই ফেরার অবস্থাতেই তাঁকে রাখা হয়েছিল টাউন কংগ্রেস সভাপতির পদে। ডোমকল পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের দখলে আসার পরে বিজয় উৎসবে হাজির হলে সংবাদমাধ্যমে তাঁর ছবিও ছাপা হয়। কিন্তু তার পরেও পুলিশ তাঁকে খুঁজে পায়নি।
এ হেন ‘ভাগ্যবান’ কামরুর স্ত্রীও যে একই রকম ভাগ্যবতী হবেন, তা নিয়ে জেলা তৃণমূলে অনেকেরই কোনও সংশয় নেই। কামরু অবশ্য এ দিন স্ত্রীর শপথ নেওয়া দেখতে হাজির হননি। বস্তুত, ওই ছবি বেরনোর পর থেকেই তিনি কিঞ্চিত সাবধান। স্ত্রীর প্রচারেও তাঁকে বিশেষ দেখা যায়নি। কিন্তু পর্দার পিছনে থাকতে ক্ষতি কী, যদি উপহার আসে সহধর্মিনীর নামে?
তৃণমূলে জল্পনা রয়েছে জিতেও ঘর বদলে আসা জোটের তিন নেতার ভবিতব্য নিয়ে। সিপিএমের লোকাল সদস্য রফিকুল ইসলাম যে দলের সঙ্গে এতটা বিশ্বাসঘাতকতা করলেন, তাঁকে কী উপহার দেবেন সৌমিক? কংগ্রেস কর্মীদের মাটি কামড়ে লড়াই যাঁকে জিতিয়ে এনেছিল, সেই বিল্লাল হোসেনই বা দলত্যাগের কী পুরস্কার পাবেন? নিন্দুকে বলে, দলের প্রার্থীকে হারিয়ে আসাদুল শেখকে জেতানোর আসল কারিগর সৌমিকই। তাঁর জন্য কি কোনও কুর্সি রাখা আছে?
এক দল বলছেন, আলবত আছে। আর আদি তৃণমূল নেতাদের আশা, পুরনো চাল যে ভাতে বাড়ে, সৌমিক জানেন। দলের নিষ্ঠাবান সৈনিকদের বদলে বিশ্বাসঘাতকদের মাথায় তুলে নাচানাচি করবেন না।
সাবধানী সৌমিক শুধু বলছেন, ‘‘পুরসভার কোন দায়িত্ব কার হাতে থাকবে, সবটাই ঠিক করবে দল। দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’’as