যোগ: সৌমিকের সঙ্গে তৃণমূলের পতাকা হাতে বিল্লাল। নিজস্ব চিত্র
শেষতক, তাঁর কথাই মিলে গেল অবিকল!
পুর ভোট ঘোষণার আগেই, ডোমকলে এসে শুভেন্দু অধিকারীর সতর্কবার্তা ছিল— ভোটে সকলেই জেতার চেষ্টা করবেন।’’ না হলে?
তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা পর্যবেক্ষক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে গিয়েছিলেন, ২১-০ শূন্য না হলে, বিরোধী টিকিটে যাঁরা জিতবেন, ফল ঘোষণার পরে তাঁরাই মঞ্চে জায়গা করে নেবেন। বাকিরা হারিয়ে যাবেন!
গত বুধবার, ফল ঘোষণার ঘণ্টা কয়েকের মধ্যেই বাম ও কংগ্রেসের দুই জয়ী প্রার্থী সবুজ আবীর মেখে হাসি মুখে জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘‘এ ছাড়া উপায় ছিল না!’’ বিরোধীদের ‘বিশ্বাস’ একা টিঁকিয়ে রেখেছিলেন ২১ ন্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী কংগ্রেস প্রার্থী বিল্লাল শেখ। দিন কয়েক সরু সুতোর উপরে সেই বিশ্বাস ঝুলিয়ে রেখে মঙ্গলবার, তিনিও জেলা যুব নেতা সৌমিক হোসেনের হাত ধরে বদলে ফেললেন দল।
ভাঙা-বিশ্বাসকে আরও এক বার দুমড়ে মুচড়ে এ দিন বহরমপুরে তৃণমূলের কাযার্লয়ে দাঁড়িয়ে বিল্লাও সেই পুরনো রেকর্ঢই বাজাচ্ছেন, ‘‘মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উন্নয়নের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে চাই।’’
গত রবিবার, তৃণমূলের তাণ্ডবের মুখেও ডোমকলের ২১ নম্বর ওয়ার্ডে জোট প্রার্থী কংগ্রেসের বিল্লাল সেখ ৩৫৬৫ ভেটের মধ্যে পেয়েছিল ২৯৬৭ ভোট। শাসক তৃণমূলের মুক্তার শেখের জুটেছিল সাকুল্যে ৫১৩টি ভোট। চার দিকে শাসক দলের নেতা-কর্মীদের হুঙ্কারেরহ মাঝে জলঙ্গির পাড় ঘেঁষা ওই ওয়ার্ডটিতে দাপিয়ে বেড়িয়েছিল কংগ্রেস। লড়াই করেছিল দাঁতে দাঁত চেপে। এমনকী তার লড়াই দেখে তাঁকে ঘিরে বাঁচতে চেয়েছিল ডোমকলের কংগ্রেস কর্মীদের অনেকেই। দলের নেত্রী শাওনী সিংহ রায় বলেছিলেন, ‘‘দামাল বিল্লাল আছে। ওঁকে দেখেই বাঁচবে কংগ্রেস।’’ কিন্তু ফল ঘোষণার পর এক সপ্তাহ ঘুরল না, এ দিন ঈষৎ ক্ষুণ্ণ মুখেই তাঁকে দেখা গেল, তৃণমূল কার্যালয়ে সৌমিকের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে।’’ যুক্তি হিসেবে, ডিগবাজি খাওয়া রফিকুল, আসাদুলের মতোই উন্নয়নের গল্প শোনা গিয়েছে বিল্লালের মুখেও। বলছেন, ‘‘ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেই দল বদল করেছি। তারা সকলেই বলেছে যা হবার হয়ে গিয়েছে, আর নয়। জেদ ধরে লাভ নেই, দাদা তুমি তৃণমূলে যাও। তাই এলাম।’’
তবে, শাওনী বলছেন, ‘‘যে ভাবে ভয় দেখিয়ে তৃণমূল ভোট করেছে, সেই একই পথে আমাদের জেতা প্রার্থীদের দলে ভেড়াচ্ছে।’’ যা শুনে, সৌমিকের দাবি, ‘‘যা করে দেখানোর তা ১৪ তারিখেই দেখানো হয়েছে। বিল্লাল দক্ষ সংগঠক বলেই ওকে দলে নেওয়া হয়েছে।’’
আর মানুষের সেই ‘বিশ্বাস’?
তা নিয়ে অবশ্য তৃণমূলের কেই রা কাড়ছেন না। তবে ২১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রবীণ এক বাসিন্দা বলছেন, ‘‘চরিত্রটাই বদলে গিয়েছে, এত সহজে ডোমকলকে বিকিয়ে যেতে দেখিনি!’’