kalyani university

সমাবর্তন নিয়ে জট কাটল না

মঙ্গলবার দুপুর থেকে কয়েক জন তৃণমূলপন্থী শিক্ষক, কর্মচারী ও টিএমসিপি-র কয়েক জন ছাত্র রেজিস্ট্রারের ঘরের সামনে জমায়েত হন। পরে উপাচার্যের ঘরের সামনে গিয়ে সমাবর্তন স্থগিত করার দাবি তুলে স্লোগানও দেন তাঁরা

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রানাঘাট শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:২০
Share:

উপাচার্যের দফতরে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ। মঙ্গলবার কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছবি: অমিত মণ্ডল।

সমাবর্তন নিয়ে মঙ্গলবার দিনভর টানাপড়েন চলল কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইতিমধ্যেই সমাবর্তন উৎসবের কমিটি থেকে কয়েক জন তৃণমূলপন্থী শিক্ষক সরে দাঁড়িয়েছেন। সূত্রের খবর, সমাবর্তন উৎসবের সব কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

মঙ্গলবার দুপুর থেকে কয়েক জন তৃণমূলপন্থী শিক্ষক, কর্মচারী ও টিএমসিপি-র কয়েক জন ছাত্র রেজিস্ট্রারের ঘরের সামনে জমায়েত হন। পরে উপাচার্যের ঘরের সামনে গিয়ে সমাবর্তন স্থগিত করার দাবি তুলে স্লোগানও দেন তাঁরা। এক সময়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে সামনে দফায়-দফায় অবস্থান বিক্ষোভও করা হয়। সেই তালাবন্ধ অবস্থাতেই আধিকারিকেরা উপাচার্যের দফতরে আলোচনা চালান। রাত পর্যন্ত অধিকারিকরা সেখানেই আটকে থাকেন।

অন্য দিকে, বৃহস্পতিবারের সমাবর্তন উৎসবের জন্য প্রস্তুতির শেষ লগ্নে নানা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে। ২০১৮ সালের পর ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে এ বার আবার সমাবর্তন হওয়ার কথা। রাজ্য ও রাজ্যের বাইরে বিভিন্ন জায়গা থেকে সমাবর্তনে শংসাপত্র নেওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীরা ট্রেনের টিকিটও কেটে ফেলেছেন বলে জানা যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিও মঙ্গলবার সমাবর্তনের দাবি করে উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে চিঠি দিয়েছে।

Advertisement

বিক্ষোভকারীদের দাবি, ছাত্রছাত্রীদের শংসাপত্রে উপাচার্যের সই থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে যিনি রয়েছেন, তিনি অস্থায়ী। আর অস্থায়ী উপাচার্যদের বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। সে ক্ষেত্রে তিনি আদৌ শংসাপত্রে সই করতে পারেন কি না বা ভবিষ্যতে ছাত্রছাত্রীরা এই শংসাপত্র নিয়ে ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়বেন কি না তা দেখা দরকার। সে ক্ষেত্রে স্থায়ী উপাচার্য এলে সমাবর্তন উৎসব করা হোক। তবে এ দিন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে তৃণমূলপন্থী অনেক শিক্ষক ও কর্মী বা টিএমসিপি-র অনেক ছাত্রছাত্রীকেই দেখা যায়নি।

তৃণমূলপন্থী শিক্ষক বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় বলেন, "সমাবর্তন উৎসব নিয়ম মেনে হোক। রাজ্য সরকার ও রাজ্য সরকারের শিক্ষা সেলের অনুমোদন নিয়ে হোক।" অন্য দিকে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রবীর প্রামাণিক বলেন, "ছাত্রছাত্রী বা গবেষকদের স্বার্থে সমাবর্তন অনুষ্ঠান হওয়া উচিত। আমরা উপাচার্যকে বলেছি, কোনও রকম সহযোগিতা প্রয়োজন হলে আমরা দু'হাত বাড়িয়ে আছি। এর আগেও অস্থায়ী উপাচার্য থাকাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠান হয়েছে।"

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, কর্মসমিতির (ইসি) বৈঠকের জন্য রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরের কাছে অনুমোদন চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু উচ্চশিক্ষা দফতর চিঠি দিয়ে তার অনুমোদন দেয়নি। ওই চিঠির সঙ্গে আরও একটি চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে অস্থায়ী উপাচার্যরা ইসি, কোর্ট, সিনেট, সিন্ডিকেট বৈঠক কোনও কিছুই করতে পারবেন না। বিষয়টি রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতরের ২০১৯ সালের নিয়মের একটি ধারায় উল্লেখ রয়েছে, যদিও তা বিচারাধীন। তবে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ওই ধারার মধ্যে পড়ছেন কি না সেই নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদেরই একাংশ সন্দিহান।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, এ বার ইসি মিটিং না করে কোর্ট মিটিং করে সমাবর্তন উৎসব হওয়ার কথা রয়েছে। কোর্টের চেয়ারম্যান আচার্য তথা রাজ্যপাল। সমাবর্তন উৎসব এক্সটেন্ডেড কোর্ট মিটিং। তিনি সমাবর্তন উৎসবের সম্মতি আগেই দিয়েছেন। ওই দিনই কোর্ট মিটিং হওয়ার কথা। সোমবারও রাজভবন থেকে সমাবর্তন অনুষ্ঠান করার কথা বলা হয়েছে। সোমবার রাতে আবার উচ্চ শিক্ষা দফতর সমাবর্তনের কোর্ট মিটিং বন্ধ করার চিঠি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন রেজিস্ট্রার দেবাংশু রায়।

সেই চিঠির বিষয়টি রাজ্যপালকে এ দিন জানানো হয়েছে। উপাচার্য অমলেন্দু ভুঁইঞা বলেন, "কেন আমাদের বলপূর্বক তালা বন্ধ করে রাখা হয়েছে, জানি না। ওঁরা আমাকে ওঁদের দাবি জানাননি। আমার অফিসের সহকর্মীদের কাছে জানতে পেরে তা আচার্য-রাজ্যপালকে জানিয়েছি। সেই সঙ্গে রেজিস্ট্রারকে উচ্চ শিক্ষা দফতরের পাঠানো চিঠির বিষয়টিও জানানো হয়েছে।"

উপাচার্য জানানোর পর রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত অবশ্য রাজভবন থেকে কোনও উত্তর আসেনি। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ অবস্থান তুুুুলে নিয়ে তাঁর দফতরের সামনে থেকে সরে গিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement