প্রতীকী ছবি।
জল বিনে গতি নেই। সে চাষই হোক বা দৈনন্দিন প্রয়োজন। কিন্তু জলের ভাঁড়ারে ঢুঁ মেরে বিজ্ঞানীদের চোখ কপালে। জোগান কই? মাটির নীচ থেকে শুধুই উঠছে জল। তুলনায় জোগান নেহাতই নগণ্য সম্প্রতি এক সমীক্ষায় যে তথ্য উঠে এসেছে, তা ভয়াবহ। রাজ্যের ৭৬টি ব্লকের অবস্থা ভয়াবহ। সবচেয়ে করুণ হাল মুর্শিদাবাদের। তালিকায় উপরের দিকেই রয়েছে নদিয়াও। শেষ পর্যন্ত সরকার এই ব্লকগুলিতে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তার মধ্যে অন্যতম এই ব্লকগুলিতে নতুন করে কোনও নলকূপ বসানো যাবে না। এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকরি হলে বোরো চাষ ধাক্কা খাবে বলে মনে করছেন চাষিরা। সরকারের ভাবনায় রয়েছে বিকল্প সেচের ব্যবস্থা।
মূলত খরার সময় বোরো ধান চাষেই উজার হচ্ছে ভূগর্ভস্থ জলের ভাঁড়ার। সম্প্রতি রাজ্য সরকারের জলসম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন দফতরের অধীন সুইড বা ‘স্টেট ওয়াটার ইনভেস্টিগেশন ডিরেক্টরেট’ একটি রিপোর্টে জানিয়েছে, রাজ্যের মোট ৭৭টি ব্লকে ভূগর্ভস্থ জলের ভাঁড়ারের অবস্থা সঙ্কটজনক। এর মধ্যে ৭৬টি ব্লককে চিহ্নিত করা হয়েছে ‘সেমি ক্রিটিক্যাল’ বলে। হুগলির গোঘাট ২ ব্লক চিহ্নিত হয়েছে ‘ক্রিটিক্যাল’ বা সঙ্কটজনক বলে। সরকার নির্দেশ জারি করেছে, এই ব্লকগুলিতে নতুন করে কোনও নলকূপ বসানোর অনুমতি মিলবে না।
সমীক্ষায় ভূগর্ভস্থ জলের ভাঁড়ারের সবচেয়ে করুণ অবস্থা মুর্শিদাবাদের। জেলার মোট ১৭টি ব্লক ‘সেমি ক্রিটিক্যাল’ বলে চিহ্নিত হয়েছে। এরপরের স্থান হুগলির। যুগ্মভাবে তৃতীয় স্থানে রয়েছে নদিয়া ও বর্ধমান। এই দুই জেলার ১১টি করে ব্লকের জলস্তর সঙ্কটে রয়েছে বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে।
মুর্শিদাবাদের ব্লকগুলির মধ্যে রয়েছে ভগবানগোলা ১ ও ২, বড়ঞা, ভরতপুর ১ ও ২, ডোমকল, জলঙ্গি, কান্দি, খড়গ্রাম, লালগোলা, নবগ্রাম, নওদা, জিয়াগঞ্জ, রানিনগর ১ ও ২, সুতি-২, সাগরদিঘি এবং লালগোলা। নদিয়ার ১১টি ব্লকের মধ্যে রয়েছে চাপড়া, হাঁসখালি, কালীগঞ্জ, করিমপুর ১ ও ২, তেহট্ট ১ ও ২, কৃষ্ণগঞ্জ, কৃষ্ণনগর-১, নাকাশিপাড়া এবং রানাঘাট ২ ব্লক।
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন জল বিজ্ঞানী এবং বর্তমানে ওডিশার সেঞ্চুরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক আফতাব জামানের কথায়, ‘‘মাটির নীচে থেকে যে পরিমাণ জল তোলা হয়েছে, সেই পরিমাণ জল পূরণ হচ্ছে না। তাই এই অবস্থা। কৃষি ছাড়াও শিল্প থেকে নাগরিক প্রয়োজনে জলের ব্যবহার বাড়ছে। প্রচলিত সেচপদ্ধতি বদলে অনুসেচ পদ্ধতির ব্যবহার বাড়াতে হবে।’’ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কৃষির পাশাপাশি বাড়াতে হবে জলের উৎপাদনশীলতাও।
নদিয়ার উপ কৃষিঅধিকর্তা রঞ্জন রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার কমাতে ‘শ্রী’ পদ্ধতিতে ধান চাষ নদিয়া জেলায় সবথেকে বেশি জমিতে হচ্ছে। শ্রী পদ্ধতির চাষে জলের ব্যবহার খুবই কম। সেই সঙ্গে ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্পে বৃষ্টির জল সঞ্চয় করে চাষের কাজে ব্যবহার করার প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে।’’ একই বক্তব্য মুর্শিদাবাদের উপ কৃষি অধিকর্তা তাপস কুণ্ডুরও।
বর্ধমান জেলার সহ কৃষিঅধিকর্তা পার্থ ঘোষ মনে করেন, যে সব জেলায় ধানের উৎপাদন বেশি, সঙ্কটও সেখানেই বেশি। কম সেচ প্রয়োজন, এমন চাষ বাড়ানো দরকার। তাঁর পরামর্শ, বিন্দু সেচ, ফোয়ারা সেচের ব্যবহার বাড়ানো হোক।