অভিযোগ উঠল মুকুলের পুত্রবধূর বিরুদ্ধে।
কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল রায়ের গাড়ির চালক রাজু মণ্ডলের বাড়ি গিয়ে তাঁর পরিবারের লোকজনকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল মুকুলের পুত্রবধূর বিরুদ্ধে।
মদনপুর-পঞ্চায়েতের আলাইপুরের বিলপাড়া পঞ্চায়েতর বাসিন্দা রাজু প্রায় পাঁচ বছর ধরে মুকুল রায়ের গাড়ির চালক হিসাবে কর্মরত। তিনি বর্তমান দিল্লিতে মুকুল রায়ের সঙ্গে আছেন। গত মঙ্গলবার রাতে চাকদহ থানার মদনপুর ফাঁড়ি থেকে পুলিশও গিয়েছিল রাজু মণ্ডলের বাড়িতে। রাজুর পরিবারের দাবি, পুলিশ এসে বেশ কিছু ক্ষণ তাঁদের জেরা করে। তার পর পরিবারের লোকজনের ছবি, মোবাইল নম্বর, রাজুর আধার কার্ড, ভোটার কার্ডের প্রতিলিপি নিয়ে যায়। যদিও পুলিশ কর্তাদের পাল্টা দাবি, মুকুল রায়ের গাড়ির চালক মদনপুরে থাকেন, এটা তাঁরা সংবাদমাধ্যমে দেখেছিলেন। তার পর কৌতূহলবশত তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়েছিলেন।
মঙ্গলবারের ঘটনায় রাজুর পরিবারের তরফ থেকে পুলিশে কোনও লিখিত অভিযোগ করেনি। রাজুর স্ত্রী শম্পা মণ্ডল বলেন, “আমরা মধ্যবিত্ত মানুষ। ওঁরা প্রভাবশালী লোক। ওঁরা হুমকি দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে আমরা কেস করতে পারি না। কেস মানে আমাদের কাছে আতঙ্কের বিষয়।”
কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল রায়কে পরিকল্পনা করে তাঁরই গাড়ির চালক রাজু মণ্ডল অপহরণ করেছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন মুকুলপুত্র শুভ্রাংশু রায়। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে এগারোটা- বারোটা নাগাদ শুভ্রাংশু রায়ের স্ত্রী রাজুর বাড়িতে এসে তাঁর পরিবারের লোকজনকে জেলে ভরে দেওয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগ।
রাজুর পরিবারের তরফে অভিযোগ, তাঁদের বাড়ি এসে শুভ্রাংশু রায়ের স্ত্রী শাসিয়েছেন এবং কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে যাওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছেন। তাঁদের বছর চারেকের ছেলেকে অনাথ আশ্রমে রেখে দেওয়া হবে বলে শাসিয়েছেন! রাজুর স্ত্রী শম্পা মণ্ডল বলেন, “এই কথা শোনার পরে মঙ্গলবার থেকেই আমরা আতঙ্কে রয়েছি। চিন্তায় খাওয়াদাওয়া বন্ধ।” রাজুর মা কল্যাণী মণ্ডলের কথায়, “আমার ছেলের তো মুকুল রায়কে কোথাও নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা নেই। মুকুল রায় নিয়ে গিয়েছেন, তাই আমার ছেলে গিয়েছে। মুকুল রায়ের ছেলের বউ আমার ছেলের বউকে অনেক ছোট-বড় কথা বলে গিয়েছেন। ওঁরা যাওয়ার পর আমার স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।”
ঘটনার কথা অস্বীকার না-করে বুধবার শুভ্রাংশু বলেন, “এক জন গাড়ি চালকের কাজ কী? সে যদি তাঁর মালিককে নিয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে এয়ারপোর্টের মাঝখানে গাড়ি রেখে, চাবি না দিয়ে প্লেনে উঠে চলে যায়, তা হলে কী বলা হয়? বেতন নেয় আমার থেকে আর বাবার সঙ্গে দিল্লিতে বসে রয়েছে! বাড়িতে আরও গাড়ির চালক রয়েছে। কেউ তো এই ঔদ্ধত্য দেখায় না!”
তাঁর আরও দাবি, প্রচুর টাকা ধার রয়েছে রাজুর। মুকুল রায়ের যখন কোনও খোঁজ মিলছিল না তখন এয়ারপোর্ট থানায় রাজুর বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করা হয়েছিল। পরে জানা যায় যে, মুকুল রায় স্বেচ্ছায় দিল্লি গিয়েছেন। শুভ্রাংশুর কথায়, ‘‘যখন তিনি কোথায় আছেন জানা যাচ্ছিল না তখন পরিবারের লোক তাঁকে খুঁজতে যাবে না? বলবে না যে, যদি না পাওয়া যায় তা হলে পুলিশ এসে আপনাদের ধরে নিয়ে যাবে?’’
বুধবার রাজু মণ্ডল ফোনে দিল্লি থেকে বলেন, “এই রকম একটা ঘটনা ঘটেছে শুনেছি। স্যারকে (মুকুল রায়) বলেছি। স্যর বলেছেন, এই রকম হয়। এটা নিয়ে ভাবতে হবে না।”