Rejinagar

দুর্বিষহ গত বছরের পরে এ বার সংসারটাই ভেসে গেল 

নতুন বছরে একটু আনন্দ করতে বেরিয়ে আমার গোটা পরিবারটা শেষ হয়ে গেল।

Advertisement

সমীর মালাকার 

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:০৩
Share:

মৃতদের পরিজন।

প্রতিবারই নতুন বছরের শুরুতেই আমরা কোথাও না কোথাও ঘুরতে যাই। এ বছরও আমার স্ত্রী ও ছেলে হাজারদুয়ারি ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। প্রথমে আমি বাধা দিয়ে বলি যে এ মাসে হাতে সেরকম টাকা পয়সা নেই। পরের মাসে যাব।

Advertisement

আমি এলাকায় সামান্য প্যাণ্ডেলের মিস্ত্রীর কাজ করি। আমার ছেলেটা রানাঘাটের একটি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। স্ত্রী গৃহবধূ। মাসখানেক আগে বাড়ির সকলে মিলে ঠিক হয় যে ৫ জানুয়ারি মঙ্গলবার আমরা মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারি ঘুরতে যাব। ঘুরতে যাওয়া নিয়ে সকলেই খুব উৎসাহী ছিল। বিশেষ করে আমার ১২ বছরের ছোটো ছেলেটা প্রথমবার হাজারদুয়ারি দেখতে যাবে বলে দিন কয়েক আগে থেকেই আনন্দ করছিল। রাত দুটো নাগাদ ছোটো গাড়িতে করে আমরা রানাঘাট থেকে রওনা দিই।

ভোর সওয়া পাঁচটা নাগাদ আমাদের গাড়ি যখন রেজিনগর পৌঁছয়, তখন আমার খুব প্রস্রাব পাই। জাতীয় সড়কের পাশে গাড়িটা দাঁড় করিয়ে পাশের জঙ্গলে শৌচকর্ম করতে যাই। শৌচকর্ম সেরে গাড়িতে চাপতে যাব, এমন সময় পিছন থেকে আচমকা একটি ১২ চাকার লরি দ্রুত গতিতে এসে আমাদের গাড়িকে ধাক্কা মারে। আমার চোখের সামনে গাড়িটি উড়ে গিয়ে বেশ কিছুটা দূরে পড়ে। ফাঁকা রাস্তায় কী করব,বুঝেই উঠতে পারছিলাম না। হতভম্ব হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছিলাম। পরে আত্মীয়দের ফোন করে খবর দিই। স্থানীয়রা বিকট শব্দ শুনে ছুটে আসে। গাড়ির কাছে গিয়ে দেখি ঘটনাস্থলেই আমার স্ত্রী ও ছোট্টো ছেলেটা মারা গিয়েছে। রক্তে দেহ ভেসে যাচ্ছে। তার সাথে আমার দুই মাসি শাশুড়িও মারা গিয়েছেন। পরে মেডিক্যাল কলেজে আমার শাশুড়ি ও শ্যালকও মারা যান।

Advertisement

নতুন বছরে একটু আনন্দ করতে বেরিয়ে আমার গোটা পরিবারটা শেষ হয়ে গেল। এরকম নতুন বছর আমি চাই নি কখনও। আর কারও জীবনে যেন এরকম নতুন বছর না আসে, এটাই প্রার্থনা করি।

গত বছরটা আমার কেটেছে খুবই কষ্ট করে। টানা বহু মাস ধরে চলেছে লকডাউন। সব অনুষ্ঠান বন্ধ ছিল। কোনও মতে আগের বছরের পুঁজি ভাঙিয়ে সংসারটা টানছিলাম। তার মধ্যেই আনলক পর্বে আস্তে আস্তে কাজ ফিরে ফেলাম। কিন্তু তাতেও বেড়াতে যাওয়ার সংস্থান হয়নি। পিকনিক করতেও আমার মন চাইছিল না। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয় হাজারদুয়ারি যাব। হাজারদুয়ারি প্রায় সোয়াশো কিলোমিটার রাস্তা। তাই আমরা ঠিক করেছিলাম, রাত থাকতেই বেরিয়ে পড়ব। ভোরে লালবাগে পৌঁছে গিয়ে সারা দিন সেখানে কাটিয়ে রাতের মধ্যে রনাঘাট ফিরে আসব। কিন্তু কী ভেবেছিলাম, আর কী যে হল! আমার সংসারটা ভেসে গেল চোখের সামনে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement