প্রতীকী ছবি।
সাইকেলটা ল্যাম্পপোস্টের গায়ে ঠেকিয়ে রাখতে-রাখতে ছেলেটি কথাটা ছুড়ে দিল জটলার দিকে— “হাঁসের গায়ে বোম মেরেছে আজ!” সঙ্গে-সঙ্গে পাল্টা ভেসে এলো, “কাল তো ত্রিশূল দিয়ে হাতি মেরেছিলে বাবা! আমার সময়টাই খারাপ যাচ্ছে।”
নবদ্বীপ শহরের আনাচে-কানাচে কান পাতলেই এখন এমন অদ্ভুত সাংকেতিক সংলাপ শুনতে পাওয়া যায়। এ সবই সাট্টার নিজস্ব ভাষা। সাট্টায় ০ থেকে ৯ পর্যন্ত প্রতিটি সংখ্যার নিজস্ব সাংকেতিক নাম আছে। যেমন, হাঁস মানে ২ আর বোম মানে ০। হাঁসের গায়ে বোম মেরেছে মানে ২০। আবার ত্রিশূল হল ৩, হাতি হল ৯। ত্রিশূল দিয়ে হাতি মারার অর্থ ৩৯।
এ ভাবেই সাংকেতিক ভাষায় বাজি ধরা হয় বা ফলাফল জানানো হয় সাট্টায়। খেলা হয়ে যাওয়া সাপ্তাহিক লটারির টিকিটের শেষ নম্বর মিলিয়ে এই সাট্টা নবদ্বীপ জুড়ে রমরমিয়ে চলছে। দুর্গাপুজো-কালীপুজোর সময় এর দাপট আরও বাড়ে। সারা দিনে তিন বাজি অর্থাৎ তিন বার করে খেলা হয়। সাপ্তাহিক লটারির ফলাফল দেখে খেলার ফলাফল জানতে পারেন জুয়াড়িরা। লটারির প্রথম এবং দ্বিতীয় পুরস্কারের শেষের নম্বরটি সাট্টার ফলাফল। সেই নম্বর মিললেই হাতে গরম ১১ টাকার বিনিময়ে ৬০০ টাকা।
শূন্য থেকে ন’য়ের মধ্যে যে কোনও একটি নম্বরে টাকা লাগালে যদি সেই নম্বরটি আসল লটারির ফলাফলের সঙ্গে মিলে যায় তবেই টাকা পেয়ে যাবে জুয়াড়িরা। প্রথম পুরস্কারের শেষ নম্বর এবং দ্বিতীয় পুরস্কারের শেষের নম্বর একত্রে সাট্টার ভাষায় ‘জুড়ি’। এই জুড়ি মিলে গেলে জুয়ারি এগারো টাকার বিনিময়ে পান ৬০০ টাকা। নবদ্বীপ শহরের প্রাচীনমায়াপুর, পীরতলা, রানিরঘাট, প্রতাপনগর, ফাঁসিতলা, মনিপুর, স্টেশন রোড, মালঞ্চপাড়া, পোড়ামাতলা – শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ জুড়ে একশ্রেণির যুবক এই কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। দিনভর সাট্টার বুকিদের ঘিরে চলে টাকা লাগানো। সাদা কাগজে খসখস লেখা হয় সব।
সাট্টা নিয়ে বার নড়েচড়ে বসেছে নবদ্বীপের পুলিশ। বুধবার রাতে আচমকা অভিযান চালিয়ে পুলিশ নবদ্বীপ শহরের উত্তরাঞ্চল থেকে ১১ জন সাট্টার জুয়াড়িকে গ্রেফতার করেছে। তাদের বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগরে অবকাশকালীন আদালতে তোলা হয়।