ছাড়পত্র: সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক স্বামী বিশ্বময়ানন্দের হাতে মোটর ট্রেনিং স্কুল খোলার কাগজপত্র তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
জেলায় একশো শয্যার বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ঠিক মতো বলতে না পারায় মুখ্যমন্ত্রীর ধমক খেলেন মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিরুপম বিশ্বাস।
বেসরকারি হাসপাতালের উপরে যে নজরদারি কলকাতায় শুরু হয়েছে, তা যে জেলার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, বৃহস্পতিবার বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা কার্যত স্পষ্ট করে দিয়েছেন। বৈঠকের শুরুতেই তিনি জানতে চান, ‘‘জেলায় ১০০ বেডের বেসরকারি হাসপাতাল কত আছে?’’ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) সম্ভবত এই প্রশ্নের জন্য তৈরি ছিলেন না। ভেবে-টেবে তিনি একটি সংখ্যা বলেন। কিন্তু পাশ থেকে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব জানান, মুর্শিদাবাদে ১০০ শয্যার কোনও নার্সিংহোম নেই।
সিএমওএইচের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আপনি ভুল বলছেন। সিএমওএইচ সাহেব, পড়াশোনা করতে হবে। অ্যাকটিভ হতে হবে। এ রকম করলে চলবে না।’’ জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের দাবি, হাসপাতালে এত দিন প্রসব হত ৬২ শতাংশ। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৯২ ভাগ। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এটাকে ১০০ শতাংশে নিয়ে যেতে হবে।’’
বৈঠকে ছিলেন নার্সিংহোম ও বেসরকারি হাসপাতাল মালিকেরাও। গরিবদের পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের মানবিক হতে বলেন মমতা। কিন্তু সরকারের এই কড়া মনোভাবের সুযোগ নিয়ে কিছু লোকজন যে অন্যায় সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছেন, সে প্রসঙ্গও টেনেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘মানবিক হওয়া মানে এই নয় যে পরিষেবা নিতে এসে ভাঙচুর করবে। তা মেনে নেওয়া যাবে না। পুলিশকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’’
প্রশ্ন ওঠে কিসান মান্ডি নিয়েও।
জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী জানান, ‘‘২১টি কিসান মান্ডির মধ্যে একটি ঠিকঠাক চলছে। বাকি ২০টি আংশিক চালু আছে।’’ মমতা বলেন, ‘‘সব মান্ডি পুরোদমে চালাতে হবে। কাছাকাছি থাকা হাটগুলোকে কিসান মান্ডিতে তুলে নিয়ে যেতে হবে।’’
প্রশ্ন ওঠে, শুধু ফসল তুলে আনলেই তো হবে না, সংরক্ষণেরও ব্যবস্থা চাই। আম, লিচু ও কাঁঠালের জন্য বিখ্যাত মুর্শিদাবাদ। সংরক্ষণ-প্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক সময়ে ফল নষ্ট হয়, বা দালালদের কাছে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন চাষিরা।
সমশেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলাম আম প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্পের কথা তুলেছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে গোড়াতেই থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘সন্তানই ভূমিষ্ঠ হল না, তার আবার অন্নপ্রশানের ডেট ঠিক করছেন!’’ অর্থাৎ আম পাকার মরসুম আসার পরে সরকার সংরক্ষণের কথা ভাবতে বসবে! অর্থাভাবের কথা তুলে ধাক্কা খান জেলা পরিষদের সভাধিপতি সাহনাজ বেগমও। বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলতেই মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বসিয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘টাকা নেই। যা দিয়েছি, তা নিয়েই খুশি থাকুন।’’
এ বার পেঁয়াজের অতিফলন হওয়ায় চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, মিড-ডে মিলের জন্য সহায়ক মূল্যে মুর্শিদাবাদের পেঁয়াজ কেনা হবে। কিছু পেঁয়াজ হুগলির বলাগড়ে সংরক্ষণ করা হবে। মমতা বলেন, ‘‘এখন থেকে মিড-ডে মিলের জন্য প্রতিটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ও স্কুলে জবকার্ড থাকা দু’জনকে নিয়োগ করা হবে। ফলে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে রাজ্যে আরও মোট ২ লক্ষ ৪৮ হাজার লোক কাজ পাবে।’’ রাজ্যে ডিম উৎপাদনে ঘাটতি মেটাতে হাঁস-মুরগি পালনের উপরেও জোর দেন তিনি। বিড়ি শ্রমিকদের সমীক্ষার দায়িত্ব তিনি শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে দিয়েছেন।