মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র
মুখ্যমন্ত্রী যে নদিয়া সফরে আসতে পারেন, সেই সম্ভাবনা বেশ কিছু দিন ধরেই ঘুরছিল জেলা প্রশাসনের অন্দরে। তিনি আসছেন সেটা নিশ্চিত হতেই বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়ে গেল যুদ্ধকালীন তৎপরতা। টানা পাঁচ দিন ছুটির মায়া কাটিয়ে জেলায় ফিরে এসেছেন জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের বেশির ভাগ কর্তা। কেউ কেউ আবার ছুটির মধ্যেই বাড়িতে বসে প্রশাসনিক বৈঠকের রিপোর্ট তৈরি করছেন। তবে মুখ্যমন্ত্রী সামনের সপ্তাহে ৩ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আসতে পারেন বলে জানা গেলেও রাত পর্যন্ত তাঁর সফরসূচি নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি জেলা প্রশাসন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, মতুয়া অধ্যুষিত রানাঘাট মহকুমা ও জেলাসদর কৃষ্ণনগরে মুখ্যমন্ত্রীর কর্মসূচি থাকবে বলে প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি রানাঘাটের হবিবপুরে ছাতিমতলা মাঠে তিনি জনসভা করতে পারেন। সেখান থেকে কৃষ্ণনগরে গিয়ে রাতে থেকে পরের দিন প্রশাসনিক বৈঠক করবেন। ওই দিন কৃষ্ণনগরেও তিনি জনসভা করতে পারেন বলে তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে। যদিও প্রশাসনের একাংশের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী রানাঘাটে ৩ ফেব্রুয়ারি জনসভা এবং কৃষ্ণনগরে ৪ ফেব্রুয়ারি প্রশাসনিক বৈঠক করতে পারেন। তবে তিনি আসছেনই, এটা ধরে নিয়ে প্রশাসনিক মহলে জোর তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে।
এ বার সরস্বতী পুজোয় তিন দিন ছুটি দিয়েছে রাজ্য সরকার। বুধবার থেকে শুক্রবার ছুটি। শনি ও রবিবার এমনিই সরকারি অফিস বন্ধ থাকে। ফলে ছুটি দাঁড়িয়েছে টানা পাঁচ দিনে। অফিস খুলবে সেই সোমবার। টানা পাঁচ দিন ছুটি পেয়ে জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন দফতরের অনেক অফিসারই কৃষ্ণনগর ছেড়েছিলেন। কেউ কাছে-পিঠে বেড়ানোর পরিকল্পনা করেছেন, কেউ বা সপরিবার বাড়ি গিয়েছেন। কিন্তু সেই ফুরসত আর কাটানো হল কই? মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকের জন্য সব দফতরের বিস্তারিত রিপোর্ট দ্রুত তৈরি করতে হবে। নইলে প্রকাশ্য সভাস্থলে হেনস্থা হওয়ার সম্ভবনা প্রবল। কিন্তু হাতে সময়ও বিশেষ নেই। ফলে বেশির ভাগ অফিসার ছুটি বাতিল করে তড়িঘড়ি ফিরে এসেছেন। যাঁদের একেবারেই উপায় নেই, তাঁরা বাড়িতে বসেই রিপোর্ট তৈরি করতে শুরু করেছেন।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “কত দিন পরে এতটা সময় নিয়ে বাড়ি এসেছিলাম। ভেবেছিলাম, সবাই মিলে জমিয়ে মজা করব। কিন্তু ফোন পেয়েই চলে আসতে হল।” তবে তার পরেই তিনি যোগ করেন, “তবে এটা তো আমাদের কাজেরই অঙ্গ।” তবে সকলেই যে ছুটি বাতিল করে ফিরে আসার বিষয়টি খুশি মনে মেনে নিতে পেরেছেন, তেমনটাও নয়। জেলার একটি ‘লাইন ডিপার্টমেন্ট’-এর এক কর্তা বলেন, “আমি বাড়িতেই আছি। কিন্তু ফোনে-ফোনে সব তথ্য জোগাড় করে রিপোর্ট বানাতে হচ্ছে। নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় পাচ্ছি না। কখন যে ম্যাডাম কী পড়া ধরে বসেন, তার তো ঠিক নেই!”