Jupiter

দুই গ্রহ কাছাকাছি, সাক্ষী রইল শহর

বৈষ্ণবদর্শনে রাধাকৃষ্ণ মিলিত হলে, তাকে বলা হয় যুগল মিলন। সোমবার পৃথিবীর মানুষ প্রত্যক্ষ করলেন সৌর জগতের অন্যতম দুই বিরাট গ্রহ শনি এবং বৃহস্পতির মিলন! যে ঘটনা চারশো বছরে একবার ঘটে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:৩৭
Share:

কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র

কৃষ্ণনগর পোস্ট অফিস মোড়ে চন্দন সান্যালের বাড়ির চারতলার ছাদ। দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে মুখ করে বসানো হয়েছে নিউটনিয়ান টেলিস্কোপ। সোমবার বিকেলে যাকে ঘিরে উৎসুক মুখের জমায়েত। চারশো বছর পরে ঘটতে চলা এক বিরল মহাজাগতিক ঘটনার সাক্ষী হতে হাজির হয়েছে নানা বয়সের মানুষ। তাঁরা জড়ো হয়েছে মহাজাগতিক যুগলমিলন দেখতে! বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছে তাঁদের বোঝাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের কৃষ্ণনগর শাখার সদস্য পুষ্পেন্দু মণ্ডল।

Advertisement

বৈষ্ণবদর্শনে রাধাকৃষ্ণ মিলিত হলে, তাকে বলা হয় যুগল মিলন। সোমবার পৃথিবীর মানুষ প্রত্যক্ষ করলেন সৌর জগতের অন্যতম দুই বিরাট গ্রহ শনি এবং বৃহস্পতির মিলন! যে ঘটনা চারশো বছরে একবার ঘটে। এর আগে ষোলোশো খ্রিস্টাব্দে যখন ওই ঘটনা ঘটেছিল তখন গ্যালিলিও জীবিত ছিলেন। ফলে, শুধু বিজ্ঞানীরাই নন, আকাশ নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন কিংবা গ্রহ-নক্ষত্রের যাতায়াতের পথে যাঁরা নজর রাখেন— এ দিন দিনভর সকলে ব্যস্ত ছিলেন শনি এবং বৃহঃস্পতির যুগ্ম অবস্থান প্রত্যক্ষ করতে। একই ব্যস্ততার ছবি দেখা গেল মদনপুর স্টেশন থেকে খানিক দূরের সগুনা পঞ্চায়েতের সবচেয়ে উঁচু বাড়ির ছাদে। চাকদহ বিজ্ঞান কেন্দ্রের সভাপতি গোবিন্দ দাস বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন, “আমাদের সৌরজগতের দুই বড় গ্রহ বৃহস্পতি এবং শনির সূর্য প্রদক্ষিণে সময় নেয় যথাক্রমে ১২ এবং ৩০ বছর। কারণ, সূর্য থেকে বৃহস্পতির দূরত্ব প্রায় ৭৮ কোটি কিলোমিটার। অন্য দিকে সূর্য থেকে শনির দূরত্ব প্রায় ১৪৩ কোটি কিলোমিটার। গড়ে কুড়ি বছর অন্তর তারা সরলরেখায় আসে। কিন্তু এবারের মতো পৃথিবী এবং ওই দুই গ্রহ একই সরলরেখায় আসে দীর্ঘ সময় অন্তর। এবং বিষয়টি পৃথিবী থেকে প্রত্যক্ষগোচর করতে সূর্য, পৃথিবী, বৃহঃস্পতি এবং শনির অবস্থান গত নানা রকম শর্তের প্রয়োজন হয়। এই বার সেই সব শর্ত পূরণ হয়েছে। তাই সোমবার দুই গ্রহের যুগল মিলন আমরা দেখতে পেলাম। যাঁরা আসছেন তাঁদের আমরা বোঝানোর পাশাপাশি টেলিস্কোপে দেখাচ্ছি।”

সোমবার এই বিরল মহাজাগতিক ঘটনা ঘটল কাকতালীয় ভাবে একটি বিশেষ দিনে, ২১ ডিসেম্বর। যে দিন উত্তর গোলার্ধে দিন সব চেয়ে ছোট, রাত দীর্ঘতম। সূর্য মকরক্রান্তি রেখার (সাড়ে ২৩ দক্ষিণ অক্ষাংশ) উপর লম্ব ভাবে আলো দেয়। ফলে দক্ষিণ গোলার্ধে দীর্ঘতম দিন।

Advertisement

পুষ্পেন্দু বলেন, “২১ ডিসেম্বর পৃথিবী থেকে বৃহস্পতি এবং শনিকে একই জায়গায় দেখতে পাওয়ার কারণ কৌণিক দূরত্বগত অবস্থান। এটি অত্যন্ত বিরল ঘটনা। বিজ্ঞান অনুসন্ধিৎসুদের সেটাই ব্যাখা করছি। যদিও বাস্তবে ওই সময় ওদের রৈখিক দূরত্ব থাকবে ৭৩.৪ কোটি কিলোমিটার।’’

তিনি জানান, এত কাছে তাদের এর আগে দেখা গিয়েছিল প্রায় ৪০০ বছর আগে ১৬২৩ সালে। তখন জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্যালিলিও জীবিত। তবে আকাশে বৃহস্পতি ও শনির অবস্থান এমনই ছিল, যে তা দেখা ছিল প্রায় অসম্ভব। সূর্যাস্তের পর বৃহস্পতি ও শনিকে এত কাছে দেখা যাবে প্রায় ৮০০ বছর পর। এমন ঘটনা এর আগে ঘটেছিল ১২২৬ সালে।

পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের নদিয়া জেলা কমিটির সম্পাদক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, “তবে এই মহাজাগতিক ঘটনা কোনও ভাবেই আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement