কখনও লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যেতে দেখা গিয়েছে। কখনও চালককে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করা হচ্ছে। কখনও আবার চড়-থাপ্পড় মেরে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দিতেও দেখা যাচ্ছে। চালকের বাঁ হাত দিয়ে গলা টিপে ধরে এবং ডান হাতে ধরা লাঠি দিয়ে ওই চালককে মারধর করার ঘটনার সাক্ষী থাকল রেজিনগর। ওই মারধরের ঘটনায় যিনি অভিযুক্ত, তাঁর পরনে ছিল হালকা নীলচে রঙের টি-শার্ট এবং ইংরেজিতে শার্টের পিছনে বড় বড় করে লেখা, সিভিক ভলান্টিয়ার।
গত মঙ্গলবার দুপুরে গাড়ি চালককে মারধরের ঘটনা মোবাইলে ক্যামেরাবন্দি করে ছড়িয়ে দেন রেজিনগরের মানুষ এবং সেই ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়তে দেরি হয়নি। কিছু সময়ের মধ্যেই বিভিন্ন মোবাইলের স্ক্রিনে তা ঘুরতেও দেখা গিয়েছে। বিষয়টি নজরে আসার পরেই জেলা পুলিশ প্রশাসন ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলছেন, ‘‘দুই সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে।’’
মঙ্গলবার দুপুরে রেজিনগর থানার দাদপুর এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে একটি ছোট গাড়ি কয়েকজন যাত্রী তুলে বেলডাঙা থেকে রেজিনগরের দিকে যাচ্ছিল। সেই সময়ে রাস্তার উপরে যান নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রাফিক বেষ্টনী ছিল। অভিযোগ, ট্র্যাফিক আইন না মেনে ওই চালক বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালিয়ে ওই পথ পেরিয়ে যাওয়া চেষ্টা করেন। তখন সিভিক ভলান্টিয়ারদের এক জন গাড়িটিকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করে। চালক সে কথায় আমল দেয়নি বলেও অভিযোগ। তখন একজন সিভিক গাড়িতে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এ নিয়ে গাড়ির চালকের সঙ্গে বচসা বাধে দুই সিভিক ভলান্টিয়ারের। তখনই চালককে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করে বলে এক সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার সিভিক ভলান্টিয়ার রমজান শেখ বলেন, ‘‘সহকর্মী ঔরঙ্গজেব শেখের জামার কলার ধরে টানাটানি করে ওই চালক। বাধা দিতে গেলে উদ্ধত আচরণ করে। পরে সব মিটে গিয়েছিল। কিন্তু ওই চালক গাড়ি রাস্তার ধারে রেখে আবার ফিরে এসে আমাদের সঙ্গে অভব্যতা করে। তাকে শান্ত করতে যা করার সেটুকু করেছি মাত্র।’’
রেজিনগরের বাসিন্দা ও কংগ্রেসের বেলডাঙা ২ (পূর্ব) সভাপতি মিন্টু সিংহ বলেন, ‘‘রেজিনগরের প্রতিটি মোড়ে সিভিক ভলান্টিয়ারেরা প্রকাশ্যে গাড়ি থেকে টাকা আদায় করে। টাকা দিতে অস্বীকার করলেই চালকদের মারধর করে তারা। ওই মারধরের ঘটনা জানিয়ে আমরা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি।’’
সিপিএমের রেজিনগর এরিয়া কমিটির সম্পাদক ও জেলা কমিটির সদস্য বদরুদ্দিন বলেন, ‘‘রাস্তায় টাকা তোলার ঘটনা নিত্য দিনের।’’ বিজেপি জেলা সহ সভাপতি হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘সিভিক ভলান্টিয়ারেরা টাকা তুলছে। প্রতিবাদ করলেই মারধর করা হচ্ছে।’’ পুলিশ সুপার বলছেন, ‘‘টাকা তোলার অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’