প্রতীকী ছবি
বারবার প্রশ্ন করছে বছর তিনেকের স্নেহজিৎ, ‘‘বাবা কখন আসবে? বাবার কাজ কী এখনও শেষ হয়নি?’’ তার বাবা চিরঞ্জিত চক্রবর্তীকে গভীর রাতে গুলি করে খুন করা হয়েছে।
বহরমপুরের তৃণমূল কর্মী চিরঞ্জিতের শিশু সন্তানের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না পরিবারের লোকজন। তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে পরিবারের সদস্য থেকে পড়শিরা বলছেন, ‘‘বাবা কাজে বেরিয়েছে। কাজ সেরে বাড়ি ফিরবে।’’
খুনের পরে ৪৮ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। এখনও শোকের আবহাওয়া চিরঞ্জিতের গোরাবাজারের বাড়িতে। স্বামীকে হারানোর দগদগে স্মৃতি নিয়ে স্বামীর ছবি বুকে জড়িয়ে ধরে মাঝে মধ্যে ডুকরে কেঁদে উঠছেন চিরঞ্জিতের স্ত্রী শর্মিষ্ঠা। স্বামীকে হারিয়ে চরম সমস্যার মুখে পড়েছেন তিনি। চিরঞ্জিত পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ছিলেন। পুরসভার অস্থায়ী কর্মী হিসেবে যে বেতন পেতেন, তাতেই তাঁর সংসার চলত। চিরঞ্জিতের মৃত্যুর জেরে পরিবার পথে বসার জোগাড়।
শর্মিষ্ঠা বলেন, ‘‘ছোট ছেলেকে নিয়ে কীভাবে বেঁচে থাকব, কে আমাদের দেখবে, ভেবে কূল পাচ্ছি না।’’ চিরঞ্জিতের খুন হয়ে যাওয়ার পরের দিন রাতে তাঁর বাড়িতে জেলা তৃণমূলের নেতারা গিয়েছিলেন। তাঁরা সেই পরিবারের পাশে থাকার বার্তাও দিয়েছেন। বহরমপুর শহর তৃণমূলের সভাপতি নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা চিরঞ্জিতের পরিবারের সঙ্গে আছি। চিরঞ্জিতের স্ত্রীকে যাতে চাকরি দেওয়া যায় তার আবেদন সর্বত্র করেছি।’’
সূত্রের খবর চিরঞ্জিৎ প্রথমে কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন ছাত্রপরিষদ করতেন। তিনি বহরমপুর শহর ছাত্র পরিষদের সভাপতিও ছিলেন। দলের সামনে থেকে লড়াই করতেন। পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালে কংগ্রেসের কাউন্সিলররা দল বদল করে তৃণমূলে যোগ দিলে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। শহর তৃণমূলের সভাপতি নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘কংগ্রেসে থাকার সময় থেকেই চিরঞ্জিতের সঙ্গে আমার জানাশোনা। ওই খুবই ভাল ছিল। এ ভাবে তাঁর খুন হয়ে যাওয়া মেনে নিতে পারছি না।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ইতিমধ্যে পুলিশ সুমন রায়কে এই খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করেছে। এর পিছনে অন্য কেউ জড়িতে আছে কি না, তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছি।’’
সুমনও বহরমপুরেরই ছেলে। তাঁর সন্তানের বয়স ১১। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। তার পরিবারেও একই অবস্থা। আচমকা খুনের খবর শুনে কেউ বুঝতে পারছেন না, কী করবেন।
জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, ‘‘চিরঞ্জিত এক সময় ছাত্র পরিষদের বহরমপুর শহরের সভাপতি ছিল। ওকে কখনও খারাপ বলে মনে হয়নি। কিন্তু ২০১৬ সালে নতুন দলে, নতুন নেতৃত্বের ছত্রছায়ায় কী করেছে তা জানা নেই।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘তৃণমূলের আভ্যন্তরীণ গোলযোগের কারণে এই খুন। এক জন ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে। বাকি কেউ জড়িতে আছে কি না, পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।’’ যদিও তৃণমূলের দাবি, ‘‘ধৃত সুমন রায়ের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। ওর পিছনে কে আছে পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।’’
চিরঞ্জিতরা দুই ভাই। ২০০৭ সালে চিরঞ্জিতের বাবা রানা চক্রবর্তী ও ২০১০ সালে মা রিনার মৃত্যু হয়। দুই ভাই এক সঙ্গে থাকতো। চিরঞ্জিতের ভাই প্রসেনজিত বলেন, ‘‘বাবা মায়ের মৃত্যুর পরে দাদা আমাকে আগলে রেখেছিল। সেই দাদাকে যারা খুন করল তাদের ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি।’’
পুলিশ সূত্রের খবর চিরঞ্জিত খুনের ঘটনায় ধৃত সুমন রায় আদালতের নির্দেশে তিন দিনের পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। পুলিশের দাবি, সুমন খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছে।