মামা-ভাগ্নে বাড়ি ফিরছিলেন মোটরবাইকে। উল্টো দিক থেকে আসছিল একটি ট্রাক্টর। আচমকা ধাক্কায় বাইক থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়ে সাড়ে তিন বছরের শিশুটি। মুহূর্তের মধ্যে সেই ট্রাক্টরের চাকাতেই পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় অভিরূপ রায় নামে ওই শিশু।
জখম হয়ে মহেশগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই শিশুর মামা উৎপল ঘোষ। শুক্রবার সকালে স্বরূপগঞ্জের নবদ্বীপ ঘাট-কৃষ্ণনগর রোডের জনকল্যাণ সমিতির কাছে ওই ঘটনার পরে গ্রেফতার করা হয়েছে ট্রাক্টরের চালক সমীর সর্দারকে।পুলিশ জানিয়েছে, মোটরবাইক ও ট্রাক্টর আটক করা হয়েছে। কী ভাবে এমনটা ঘটল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ ভাগ্নেকে মোটরবাইকে নিয়ে চরমাজদিয়ায় গিয়েছিলেন উৎপল। সেখান থেকেই মাজদিয়া-পানশীলা পঞ্চায়েতের বেলতলা বাজারের বাড়িতে ফিরছিলেন তাঁরা। বাইকের সামনে বসেছিল অভিরূপ। কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, নবদ্বীপ ঘাট-কৃষ্ণনগর রোডে যানবাহনের চাপ ভালই থাকে। এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আচমকা বিকট আওয়াজে চমকে ওঠেন আশপাশের লোকজন। ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁরা দেখেন, রক্তে ভেসে যাচ্ছে রাস্তা। পড়ে রয়েছে শিশুটির ছিন্নভিন্ন দেহ। আর এক পাশে বাইকের সঙ্গেই পড়ে রয়েছেন উৎপল। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ ট্রাক্টরটিকে আটকে ভাঙচুর চালায়। মারধর করা হয় ট্রাক্টরের চালককে। বেশ কিছুক্ষণের জন্য অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে নবদ্বীপ ঘাট-কৃষ্ণনগর রোড। খবর পেয়ে নবদ্বীপ থানার পুলিশ গিয়ে চালককে উদ্ধার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অভিরূপের বাবা বিশ্বজিৎ রায় ও মামা উৎপল দু’জনেই কর্মসূত্রে ভিন রাজ্যে থাকেন। দোল উপলক্ষে তাঁরা বাড়ি ফিরেছেন। এ দিন উৎপল ভাগ্নেকে নিয়েই বাজারে বেরিয়েছিলেন। এমন ঘটনার পরে শোকস্তব্ধ বেলতলা বাজার। কথা বলার মতো অবস্থায় নেই অভিরূপের বাবা-মা।
পড়শিরা জানাচ্ছেন, বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান ছিল অভিরূপ। তাঁকে নিয়ে গোটা বাড়ি মেতে থাকত। কী করে এ সব ঘটে গেল বলুন তো? ঘটনার পর থেকে মাঝেমধ্যেই জ্ঞান হারাচ্ছেন অভিরূপের মা।
নবদ্বীপ ঘাট – কৃষ্ণনগর রোড লাগোয়া এলাকার লোকজনের অভিযোগ, এমনিতেই রাস্তাটি সঙ্কীর্ণ এবং জনবহুল। অথচ তার মধ্যেই কিছু লোকজন রাস্তার ধারে নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখেন। ফলে রাস্তা আরও সরু হয়ে যায়। তার মধ্যে দিয়ে বেপরোয়া গতিতে যান চলাচল করার ফলে মাঝে মধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। ওই রাস্তায় বেশ কয়েকটি জায়গায় স্পিড ব্রেকারেরও দাবি জানান তাঁরা।
স্বরূপগঞ্জ পঞ্চায়েতের প্রধান সিরাজ শেখ বলেন, ‘‘রাস্তাটি পিডব্লিউডির। আমরা গোটা বিষয়টি তাদের জানাচ্ছি। রাস্তার পাশে যাতে কেউ নির্মাণ সামগ্রী না রাখেন সে ব্যাপারেও আমরা পদক্ষেপ করব।”