রিপোর্টে বুক বেঁধেছে ভাঙা ‘ভাগীরথী’

একে একে বেহাত হয়ে গিয়েছিল আশ্রমের লাগোয়া জমি। মাস কয়েক হল, হাত পড়েছে আশ্রমের খোলা মাঠেও। চাকদহ শিমুরালির ভাগীরথী শিল্পাশ্রমের ছিন্নমূল মেয়েরা তাঁদের শেষ ঠাঁইটুকু হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় চিঠি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে। সাড়া মিলেছে। জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় বিধায়ককেও বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে বলেছেন মমতা বন্দ্যপাধ্যায়। সেই ভাগীরথী শিল্পাশ্রমে পা রাখল আনন্দবাজার—পাড় ভাঙার শব্দ শোনা যাচ্ছিল অনেক দিন ধরেই। ভাগীরথী শিল্পাশ্রমের কর্মী এবং আবাসিকরা টেরও পাচ্ছিলেন। কিন্তু, তাঁদের সাধের ভাগীরথী যে এমন ভয়াল ভাঙনের কবলে পড়বে তা আঁচ করতে পারেননি কেউ।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

চাকদহ শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৭ ০০:০১
Share:

পাড় ভাঙার শব্দ শোনা যাচ্ছিল অনেক দিন ধরেই। ভাগীরথী শিল্পাশ্রমের কর্মী এবং আবাসিকরা টেরও পাচ্ছিলেন। কিন্তু, তাঁদের সাধের ভাগীরথী যে এমন ভয়াল ভাঙনের কবলে পড়বে তা আঁচ করতে পারেননি কেউ।

Advertisement

আশ্রমের কর্মীরা পাড়া-পড়শির কাছে শুনছিলেন, আশ্রমের জমি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। তবে বিশ্বাস করতে পারেননি। সে বিকিকিনিতে যে পরিচালন কমিটিও জড়িয়ে রয়েছে, ভাবতে পারেননি তাঁরা।

২০১৪ সালের শেষদিকে একের পর এক জমি হাতবদল হতে শুরু করে। বছর দেড়েক আগে প্রচুর গাছ কেটে বিক্রি করে দেওয়া হয়। গত বছরের জানুয়ারি থেকে আবাসিক এবং শিক্ষকেরা স্থানীয় বিধায়ক থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অভিযোগও জানিয়েছিলেন। কিন্তু সে সময় বিধানসভা ভোট ছিল বলে তাদের সে অভিযোগ তেমন আমল পায়নি। তারই মধ্যে বিক্রি হয়ে যায় আশ্রম লাগোয়া জমি। আর, সব শেষতক হাত পড়ে আশ্রমের জমিতেও। রুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন আবাসিকেরা।

Advertisement

কীভাবে বিক্রি হচ্ছে আশ্রমের জমি? এলাকারই দুই বাসিন্দাকে জমি বিক্রির জন্য ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ দিয়েছেন পরিচালন কমিটির সভাপতি রঞ্জন ঘোষ এবং তাঁর স্ত্রী, সর্বাণী মুখোপাধ্যায়। তারা বাজার দরের থেকে কম দামে জমি বিক্রি করেছে বলে অভিযোগ। ফলে ক্রেতা পেতে অসুবিধা হয়নি। আশ্রমের জমি বিক্রির চক্রের সঙ্গে জড়িতরা প্রত্যেকের সঙ্গেই শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের যোগাযোগ রয়েছে বলেও অভিযোগ।

শুরু হয়েছে প্রশাসনিক তদন্ত। তাতে বিস্ফোরক তথ্য উঠে এসেছে। আশ্রমের জমি হিসেবে যত পরিমাণ জমি বিক্রি হয়েছে, তার কিছুটা আশ্রমের নয়। সাড়ে ১২ একর সরকারি (ভেস্টেড) জমিও তারা বিক্রি করে দিয়েছে বলে অভিযোগ। সরকারি হিসেবে প্রায় দু’কোটি টাকার জমি বিক্রি হয়েছে। সর্বাণী বলছেন, ‘‘ভাগীরথী শিল্পাশ্রম প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি। ফলে জমি বিক্রির অধিকার কমিটির রয়েছে।’’

প্রশাসন কিন্তু সর্বাণীর যুক্তিকে পাত্তা দিচ্ছে না। কল্যাণীর এসডিও স্বপন কুন্ডু বলেন, ‘‘সরকারি জমি বিক্রি করা অপরাধ। আশ্রমের নিয়মে উল্লেখ রয়েছে আশ্রমের প্রয়োজন ছাড়া জমি বিক্রি করা যাবে না। জমি বিক্রি করে যে টাকা এসেছে, তা কোন অ্যাকাউন্টে গিয়েছে, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাসও বলেন, ‘‘আমি নিজেও অনেক কিছু খোঁজ নিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রীকে সে রিপোর্ট পাঠাব।’’

প্রশাসন কী রিপোর্ট দেবে, জানা নেই আবাসিকদের। ভোরে আশ্রমের ভাঙা দেওয়াল দিয়ে আলো এসে পড়ে তাঁদের বিছানায়। আবাসিকদের বিশ্বাস তেমন কোনও আশার আলো তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। (শেষ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement