সেই প্রশ্নপত্র। নিজস্ব চিত্র
পরীক্ষা শুরুর প্রায় ৬ ঘণ্টা আগে সমাজমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে হাতে হাতে ঘুরল একাদশ শ্রেণির রসায়নের প্রশ্নপত্র!
আগেভাগে ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্ন যে আসল প্রশ্নপত্রের সঙ্গে হুবহু এক, তা স্বীকার করেছেন একাধিক স্কুল কর্তৃপক্ষ। শনিবার এই ঘটনায় জেলাজুড়ে হইচই শুরু হয়ে যায়। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (উচ্চমাধ্যমিক) দিব্যেন্দু পাল বলেন, "হোয়্যাস অ্যাপে যে প্রশ্নপত্র বেরিয়েছে তা কোথা থেকে বের হল, সেটা দেখার দায়িত্ব কাউন্সিলের। বিষয়টি আমরা কাউন্সিলের নজরে এনেছি। উচ্চ মাধ্যমিক নিয়ে সমস্যা হলে তার দায়ভার আমাদের।’’
প্রশ্ন ফাঁস হওয়া বিষয়টিকে অবশ্য তেমন গুরুত্বই দিতে চাননি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের কর্তারা। তাঁদের যুক্তি, এটি সপ্তম অষ্টম, নবমের ক্লাসে ওঠার পরীক্ষার মতোই অতি ‘সাধারণ’ পরীক্ষা। তার প্রশ্ন বের হল কী হল না, তা নিয়ে অত বিচলিত হওয়া নিষ্প্রয়োজন।
গত ১৪ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে এ বছরের একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা। শুরুর দিন থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় প্রশ্নপত্র আগে থেকে বাইরে প্রকাশিত হয়ে যাচ্ছিল বলে অভিযোগ উঠছিল। শনিবার সেই ঘটনার প্রমাণ মিলল নদিয়া জেলায়। সকাল প্রায় সাড়ে ন’টা নাগাদ বিভিন্ন হোয়্যাস অ্যাপ গ্রুপে ঘুরতে থাকে রসায়নের প্রশ্নপত্রের ছবি। দুপুর দু’টো থেকে শুরু হয় একাদশের রসায়ন পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষে নদিয়ার একাধিক স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, হোয়াটস অ্যাপে যে প্রশ্ন দেখা গিয়েছে তা আসল প্রশ্নপত্রের সঙ্গে একেবারে মিলে গিয়েছে।
অভিভাবকদের একটা বড় অংশ দাবি করেন, একাদশের পরীক্ষা নিয়ে প্রহসন চলছে রাজ্যে। পর্ষদ থেকে প্রশ্ন হচ্ছে অথচ, সেই প্রশ্নই পরীক্ষা শুরুর আগে বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে! এতে প্রকৃত মেধাবী পড়ুয়াদের ক্ষতি হচ্ছে। অথচ সরকারের বিন্দুমাত্র ভাবনা নেই।
বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন রানাঘাটের সাংসদ বিজেপির জগন্নাথ সরকার। তিনি বলেন, ‘‘দুর্নীতির শিখরে পৌঁছেছে রাজ্য সরকার। অযোগ্যকে যোগ্য বানানোই এর কাজ। তদন্ত করলে দেখা যাবে, সংসদের তৈরি প্রশ্নপত্র আগে থেকেই বাইরে বিক্রি হয়েছে। এ জন্য মোটা টাকা কাটমানিও পেয়েছে তৃণমূল সরকার।’’ নদিয়া জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ রীনা রায়ের কথায়, ‘‘বিষয়টি ঠিক কী হয়েছে, তা না জেনে কোনও মন্তব্য করব না।’’
এই ঘটনাকে তেমন গুরুত্ব দিতে চাননি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সম্পাদক তাপস কুমার মুখোপাধ্যায়। তিনি মন্তব্য করেন,‘‘সপ্তম,অষ্টম বা নবম শ্রেণিতে কোনও প্রশ্ন আগে থেকে এ ভাবে বেরিয়ে গেলে আপনারা কি খবর করেন? এটা তো সেই রকমই একটা পরীক্ষা।’’
তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘রাজ্য জুড়ে একাদশের প্রশ্ন যাতে এক হয়, সে জন্যই ওই প্রশ্ন আমরা করি। কিন্তু একাদশের পরীক্ষার ক্ষেত্রে যাবতীয় দায় স্কুলের।’’ প্রশ্ন সমাজ মাধ্যমে বেরিয়ে যাওয়া সম্পর্কে এরপর তাঁর মন্তব্য, ‘‘এটা নিয়ে কিছুই ভাবিনি। তবে এখন থেকে ভাবতে হবে। তেমন হলে আমরা আর প্রশ্ন করব না।’’