—প্রতীকী চিত্র।
গত লোকসভা ভোটে কৃষ্ণনগর পুরসভার ২০ জন পুরপ্রতিনিধির মধ্যে ১৯ জনের ওয়ার্ডেই ভরাডুবি হয়েছে তৃণমূলের। রবিবার একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ধরনের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর কৃষ্ণনগর প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তা হলে কি এই ১৯ জন পুরপ্রতিনিধির বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা হবে? কিন্তু তাতে কি ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে না? নাকি, বেছে বেছে কয়েক জনের ঘাড়ে কোপ পড়বে? নাকি শুধু পুরপ্রধানকেই ‘বলির পাঁঠা’ করা হবে?
সম্প্রতি রবীন্দ্রভবনে একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভায় পুরসভার বড় রদবদলের কথা জানিয়েছিলেন দলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার সভানেত্রী মহুয়া মৈত্র। পুরপ্রধানের পদ থেকে রিতা দাসকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে তখনই জল্পনা শুরু হয়ে যায়। রবিবার অভিষেক জানান, নিজের ভোটে প্রধান ও উপপ্রধানেরা জিতবেন আর লোকসভা বা বিধানসভা ভোটে দল তাঁদের এলাকায় পিছিয়ে পড়বে, এটা চলবে না। এঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনাচক্রে, গত দুই লোকসভা ভোটেই কৃষ্ণনগরে মুখ থুবড়ে পড়েছে তৃণমূল। বিধানসভা ভোটেও কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রে (সদরশহর এর মধ্যেই পড়ে) পঞ্চাশ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছিলেন তদানীন্তন বিজেপি প্রার্থী মুকুল রায়। যা নিয়ে একাধিক বার ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কৃষ্ণনগরের গত দু’বারের সাংসদ মহুয়া।
কৃষ্ণনগর পুরসভায় দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূলের একাধিপত্য রয়েছে। অথচ লোকসভা নির্বাচনে ২০ জন পুরপ্রতিনিধির মধ্যে একমাত্র ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল হোসেন বিশ্বাসের ওয়ার্ডে ১৩০৬ ভোটে ‘লিড’ পেয়েছে তৃণমূল। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই ওয়ার্ড বাদে গোটা শহরে পিছিয়ে থেকেছে তারা। সে ক্ষেত্রে আবুল হোসেন বাদে দলের সমস্ত পুরপ্রতিনিধির বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ করতে হয়। সেই ফর্মুলায় পরবর্তী পুরপ্রধানও আবুল হোসেন ছাড়া আর কেউ হওয়ার নেই। কিন্তু বিজেপির প্রবল প্রভাবের শহরে, যেখানে সংখ্যালঘু ভোটার মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ, সেখানে সংখ্যালঘু পুরপ্রধানের ঝুঁকি কি নেবে তৃণমূল? দলের অন্দরেই এই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে।
তা হলে, সত্যিই যদি রিতা দাসের ডানা ছাঁটা হয়, পুরপ্রধান কে হবেন? দলের পুরপ্রতিনিধির একটা অংশ উপ-পুরপ্রধান নরেশচন্দ্র দাসের হয়ে সুপারিশ করতে পারেন বলে জানা যাচ্ছে। কিন্তু লোকসভা ভোটে তাঁর ওয়ার্ডেও তৃণমূল ১২১৫ ভেটে পিছিয়ে থেকেছে। সেই সঙ্গে পুরসভার চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিলদের এলাকায় কার্যত ভরাডুবি হয়েছে দলের। পুরপ্রধানের ওয়ার্ডে ১৪৫৮ ভোটে, প্রাক্তন পুরপ্রধান অসীম সাহার ওয়ার্ডে ১৯২২ ভোটে, শহর সভাপতি প্রদীপ দত্তের ওয়ার্ডে ১২০৬ ভোটে, প্রভাবশালী নেতা শিশির কর্মকারের ওয়ার্ডে ৯৮৭ ভোটে, গৌতম মালাকারের ওয়ার্ডে ৬৩৯ ভোটে, বুলবুল সরকারের ওয়ার্ডে ৬৪৪ ভোটে ও মিলন ঘোষের ওয়ার্ডে ১৮৫১ ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। ফলে পুরপ্রধানের দৌড়ে এঁদের কেউ থাকতে পারেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
তৃণমূলেরই একাংশের দাবি, কৃষ্ণনগর পুরসভায় ২৮ হাজার ৫২৪ ভোটে পিছিয়ে থাকার কারণে যদি পুরপ্রধান পদ থেকে রিতা দাসকে সরতে হয়, সেই একই কারণে ওই সব নেতাদের কেউই পুরপ্রধান হিসেবে গণ্য হতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে কী করবেন দলীয় নেতৃত্ব? সোমবার তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান রুকবানুর রহমান বলছেন, “পুরো বিষয়টিই দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব দেখছেন। সমস্ত দিক বিচার করে দলের জন্য যা ভাল, সেই মতোই তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু বলার থাকতে পারে না।”