রফতানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে চানাচুর। নিজস্ব চিত্র
শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শহরের ঐতিহ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিল্প ও শিল্পীর নিদর্শন জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জে কম নয়। কয়েক দশক আগে পর্যন্ত এই শহরের সঙ্গে নাম জড়িয়ে ছিল হাতির দাঁতের কাজ, বালুচরী শাড়ি, কাঁসার বাসন-সহ একাধিক শিল্পের।
তবে অনেকেই নজর না রাখলেও, দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দী ধরে চানাচুর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুর এলাকার বেশ কিছু ব্যবসায়ী। জিয়াগঞ্জ, আজিমগঞ্জ দু’টি যমজ শহরের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কমবেশি ছোট ও বড় মাপের ৪০ থেকে ৫০ টি চানাচুর কারখানা। স্থানীয় বহু পরিবারের জীবন-জীবিকা এর উপরে নির্ভরশীল। শহরের অলিগলিতে যাতায়াত করলেই নাকে আসে তীব্র মসলাদার মিষ্টি ঘ্রাণ। চেখে ও চোখে দেখতে বহু দূর থেকেও অনেক মানুষই আসেন শহরে। নিজেদের সাধ্য মতো বিভিন্ন ধরনের চানাচুর কিনে নিয়ে যান তাঁরা।
যদিও এখানকার কারখানার উৎপাদিত অধিকাংশ চানাচুর রাজ্য ও ভিন রাজ্যে রফতানি হয়। বিহার, ঝাড়খণ্ড-সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের একাংশে এখানকার চানাচুরের ভাল চাহিদা বলে জানালেন, একটি চানাচুর সংস্থার কর্ণধার সুনীল চুড়ুরিয়া। তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানে রাজ্য ও রাজ্যের বাইরে বিহার, ঝাড়খণ্ডে সরাসরি আমাদের তৈরি চানাচুরনিয়মিত যায়। আগে অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয়ে আমাদের চানাচুর যেতো। বর্তমানে সেখান থেকে পাইকারি বিক্রেতাআমাদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে গিয়ে সেখানে বিক্রি করে।’’
জিয়াগঞ্জের বাসিন্দা তথা আরও এক চানাচুর সংস্থার মালিক সুশীল মণ্ডল বলেন, ‘‘ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি, জিএসটি-সহ একাধিক কাগজপত্র সামাল দিতে গিয়ে কার্যত উৎপাদনেরাশ টানতে হচ্ছে। তারপর রয়েছে চানাচুরের সঠিক গুনগত মান ধরে রাখার প্রশ্ন। লকডাউনের আগেও রাজ্যের বাইরে একাধিক রাজ্যে চানাচুর গেলেও বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহারের মধ্যেই ব্যবসা সীমিত করে দেওয়া হয়েছে।’’
তিনি আরও জানান, এখানে ছোট ধরনের যে সব কারখানা রয়েছে, তাদের তুলনামূলক ভাবে উৎপাদন খরচ কম হওয়ার কারণে তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অনেক সময় পিছু সরে আসতে হচ্ছে। তবে এ নিয়ে সাধারণ খুচরো চানাচুর বিক্রেতা প্রবীর দত্তের অভিযোগ একটু ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘‘গত এক বছরে চানাচুরের দাম কেজি প্রতি ৪০-৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।চানাচুর প্রস্তুতের জন্য যে সব সামগ্রীর প্রয়োজন হয়, তার দাম কিছু দিন আগে বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে সেই সব জিনিসেরদাম স্বাভাবিক হলেও চানাচুরের বর্ধিত দাম যেটা নেওয়া হচ্ছিল, সেটা াস্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেনি।’’
তবে এই চানাচুর শিল্পের জন্য এলাকার বেশ কিছু বাসিন্দার কর্মসংস্থান হয়েছে।