সৌরভ কর্মকার। নিজস্ব চিত্র
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে ছোটবেলা থেকেই। বাবা সামান্য সোনা-রুপোর গহনা তৈরির কাজ করে সংসার চালান। ছেলের পড়ার খরচও টানছেন সে ভাবেই। তবুও প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়াই করে ভবিষ্যতে রসায়ন নিয়ে পড়ার ইচ্ছা ছিল সৌরভের। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে কাজ নেই বাবার। ফলে, সংসারে রোজগার পুরোপুরি বন্ধ। আর্থিক সমস্যার পাশাপাশি শারীরিক সমস্যার কারণেও বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার ধকল কতটা নিতে পারবে ছেলেটি, সেটাও বুঝে উঠতে পারছে না পরিবারটি। কাজেই, আপাতত বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার স্বপ্ন ছেড়ে কলা বিভাগেই ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা ফুলিয়াপাড়ার সৌরভ কর্মকারের।
শান্তিপুর ব্লকের বেলগড়িয়া ১ পঞ্চায়েতের ফুলিয়াপাড়ার বাসিন্দা সৌরভ কর্মকারের ছোটবেলা থেকেই হাঁটাচলা করার সমস্যা রয়েছে। সে সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত বলে জানিয়েছে তার পরিবার। পায়ের সমস্যার কারণে একা একা ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারে না সৌরভ। সে হাতেও সে ভাবে জোর পায় না। কলম ধরে লিখতে সমস্যা হয় তার। তার পরেও মানসিক দৃঢ়তা থেকে সে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে এত দিন। একইসঙ্গে আর্থিক সমস্যাও রয়েছে পরিবারটির।
সৌরভের বাবা সত্যজিৎ কর্মকার সোনা এবং রুপোর গয়না তৈরির কাজ করেন। মা পদ্মা কর্মকার সংসার সামলান। সৌরভ তাঁদের একমাত্র ছেলে। ছোটবেলাতেই সেরিব্রাল পলসি ধরা পড়ে সৌরভের। বিভিন্ন জায়গায় তার চিকিৎসা করিয়েছেন তাঁরা। ভিন্ রাজ্যেও চিকিৎসা করাতে নিয়ে গিয়েছেন, অস্ত্রোপচারও করানো হয়েছে। কিন্তু সুরাহা হয়নি।
সৌরভের বাবা সত্যজিত বলেন, “অনেক জায়গায় ছেলের চিকিৎসা করিয়েছি। চিকিৎসক বলেছেন, এটা সেরিব্রাল পলসি।”
সমস্যা যাই থাকুক, তা আর্থিক সঙ্কট হোক বা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা— থেমে যায়নি সৌরভ। এই প্রতিবন্ধকতা নিয়েই প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডি পার করে ভর্তি হয়েছে ফুলিয়া শিক্ষানিকেতন স্কুলে। সেখান থেকেই এই বছর সে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। উত্তীর্ণ হয়েছে ৪৪৬ নম্বর পেয়ে। প্রতি দিন মোটামুটি ভোরবেলাতেই উঠে পড়তে বসে যাওয়ার অভ্যাস সৌরভের। এলাকার দু’জনের কাছে এতদিন প্রাইভেটে পড়েছে সৌরভ। স্কুলে এবং প্রাইভেট টিউশানির সময়ে তার বাবা সাইকেলে তাকে আনা-নেওয়া করেছেন। সৌরভের মাধ্যমিক পরীক্ষার আসন পড়েছিল ফুলিয়ারই বিদ্যামন্দির স্কুলে। সেখানেও বাবার সাইকেলে চেপে পৌঁছে গিয়েছিল সে।
বিরাট কোহলির ভক্ত সৌরভের ইচ্ছা ছিল রসায়ন নিয়ে গবেষণা করার। কিন্তু আপাতত সেই ইচ্ছা অপূর্ণ রেখে কলাবিভাগে ভর্তি হতে চলেছে সে। সৌরভের কথায়, “এই সময়ে বাবার কাজ নেই। আর্থিক সমস্যা আছে। বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার খরচ চালাব কী করে?’’
সৌরভের বাবা সত্যজিত কর্মকার বলছেন, “আমাদেরও ইচ্ছা ছিল ছেলেটা বিজ্ঞান নিয়ে পড়ুক। কিন্তু এখন যে অবস্থায় আমরা দাঁড়িয়ে, তাতে ওকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ানো আর সম্ভব হবে না। খারাপ লাগছে।”
তবে মনের জোর এখনও অটুট সৌরভের। সেরিব্রাল পলসিকে জয় করা মন এখন উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন বুনছে প্রতিনিয়ত।