রামব্রহ্ম সান্যালের বাড়ি।
স্বামী বিবেকান্দের জন্মদিনে বেলডাঙা মহুলার একটি বাড়ি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে বারবার। কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানার প্রথম ভারতীয় অধিকর্তা রামব্রহ্ম সান্যালের বাড়ি আছে এই গ্রামে। তিনি ১৮৯৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর স্বামী বিবেকানন্দকে চিড়িয়াখানা ঘুরিয়ে দেখান। তার সঙ্গে ছিলেন ভগিনী নিবেদিতা। বিবর্তন বাদ নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেন। সেই সূত্রে বিবেকান্দের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন এই রামব্রহ্ম সান্যাল। রামব্রহ্মের বাড়ি এই মহুলা গ্রামে হওয়ায় অনেক মানুষ এই বাড়ি দেখতে আসেন। এসে রামব্রহ্ম সম্পর্কে জানতে চান। মহুলা গ্রামের তার প্রতিবেশিরা জানাচ্ছেন, এই রামব্রহ্মের জন্ম ১৮৫১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি।
তাঁর জন্ম তাঁর মামার বাড়ি লালগোলায়। পরে বহরমপুর কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। তিন বছর পড়লেও তার চোখের রোগের জন্য ডাক্তারি শেষ করতে পারেননি। কিন্তু বোটানির প্রফেসর জর্জ কিং ও অ্যানাটমির প্রফেসর জন আন্ডারসনের প্রচেষ্টা কাজে লাগে। পরে কলকাতার আলিপুরে চিড়িয়াখানা স্থাপন হলে প্রথম ভারতীয় অধিকর্তা এই রামব্রহ্ম।
১৮৯৮ সালের ৪ জুন কেমব্রিজে আন্তর্জাতিক প্রানীবিজ্ঞান সন্মেলনে আমন্ত্রণ পান। তিনি ইউরোপের বিভিন্ন শহরের চিড়িয়াখানা ঘুড়ে দেখে দেশে ফেরেন। ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর স্বামী বিবেকানন্দ, ভগিনী নিবেদিতা, স্বামী যোগানন্দ চিড়িয়াখানা দেখতে আসেন। তাদের পুরো চিড়িয়াখানা ঘুরিয়ে দেখান। জীবজন্তুর পাশাপাশি চিড়িয়াখানার পরিবেশের প্রশংসা করেন। বিবর্তনবাদ নিয়ে বিবেকান্দের সঙ্গে রামব্রহ্মের বিস্তারিত আলোচনা হয়।
মহুলার রামব্রহ্মের বাড়ি এখন দেখাশোনা করেন জগৎ হাজরা ও নীলতা হাজরা। তাঁদের কথায়, “প্রচুর মানুষ এই সান্যাল বাড়ি দেখতে আসেন। ছবি তুলে নিয়ে যান। কত বড় মানুষ এই বাড়িতে এক সময় ছিলেন ভাবলে কেমন লাগে।” রামব্রহ্মের আত্মীয় অর্ণব ভট্টাচার্য বলেন, “সান্যাল বাড়ির প্রতিষ্ঠিত নারায়ণ মন্দির এখনও রয়েছে। আমরা যৌথ ভাবে এই মন্দিরের নিত্যসেবা দিয়ে থাকি।”
মহুলা গ্রামে বড় করে বিবেকান্দ জয়ন্তী পালিত হয়। মহুলা বিবেকানন্দ সমিতি ১২ ও ১৩ জানুয়ারি নানা ধরনের অনুষ্ঠান পালন করে। মঙ্গলবার পথ পরিক্রমা, পতাকা উত্তোলন, বিবেকান্দের মূর্তিতে মাল্যদান করা হয়। সারা দিন নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। রাতে নাটক পরিবেশিত হবে। মহুলা বিবেকানন্দ সমিতির সভাপতি রতন ঘোষ বলেন, “রামব্রহ্ম সান্যালের সূত্র ধরে বিবেকানন্দ কোনও না কোনও ভাবে গ্রামে সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছেন। আমরা দুই দিন ধরে বিবেকানন্দের জন্মদিন পালন করি।” সংগঠনের অন্যতম কর্তা সন্তোষ ঘোষ বলেন, “স্বামী বিবেকান্দের অন্যতম শিষ্য স্বামী অখণ্ডানন্দের সঙ্গে গ্রামের নিবিড় যোগ। কারণ প্রথম রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠিত হয় আমাদের গ্রামে। পরে সেটা সারগাছিতে চলে যায়।”