প্রতীকী ছবি। —ফাইল চিত্র
প্রেসক্রিপশন আর আধার কার্ড ছাড়া অক্সিজেন দেওয়া হবে না। করোনা পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত হয়ে সাধারণ মানুষের বাড়িতে অক্সিজেন মজুত করে রাখার প্রবণতা আটকাতে এমনটাই সিদ্ধন্ত নিয়েছেন অক্সিজেন ব্যবসায়ীরা।
এর কারণ হিসাবে তাঁরা জানাচ্ছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন অক্সিজেনের জোগান কমেছে, তেমনই অন্য দিকে হু-হু করে বাড়ছে অক্সিজেনের চাহিদা। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অনেক বেশি টাকা খরচ করে হলেও বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত করে রাখার প্রবণতা। আর সেই কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই ধরণের পদক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছেন বলে দাবি অক্সিজেন ব্যবসায়ীদের।
রাজ্য তথা জেলায় করোনার সংক্রমণ প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এখনও পর্যন্ত কোভিড হাসপাতালে শয্যা ফাঁকা থাকলেও দু-তিন দিনের মধ্যে সেটাও থাকবে না বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। আর তাই সেই সব দিনের কথা মাথায় রেখে অনেকেই চাইছেন আগে থেকে অক্সিজেন বোঝাই সিলিন্ডার কিনে বা ভাড়া করে ঘরে মজুত করে রেখে দিতে। আর তাতেই অক্সিজেনের আকাল তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
এমনিতেই সাধারণত বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম, অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য বেসরকারি ভাবে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু নদিয়া জেলায় বেসরকারি ভাবে কোথাও কোভিড রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সগুলিও কোভিড আক্রান্তদের বহন করছে না। ফলে, করোনার কারণে বেসরকারি ক্ষেত্রে অক্সিজেনের চাহিদা হঠাৎ করে এতটা বেড়ে যাওয়ার কোনও কারণ নেই, যার জন্য বাজারে অক্সিজেনের আকাল দেখা দিতে পারে, এমনটাই জানাচ্ছেন অক্সিজেন সরবরাহকারী ব্যবসায়ীরা।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে জেলায় অক্সিজেনের আকাল চলছে। বাজারে অক্সিজেন প্রায় নেই বললেই চলে। যার জন্য অক্সিজেন না পেয়ে শুক্রবার বাড়িতেই মারা গিয়েছেন শক্তিনগরের ওষুধ ব্যবসায়ী বলে অভিযোগ।
কেন এমনটা হল? অক্সিজেন ব্যবসায়ীরা বলছেন, এর নেপথ্যে অন্যতম কারণ, রাজ্যের প্লান্টগুলিতে অক্সিজেন তৈরির উপকরণের অভাবে উৎপাদন ঠিকমতো হচ্ছে না। ফলে, সরবরাহও প্রয়োজনের তুলনা কম। মিলছে না ফাঁকা সিলিন্ডারও। কৃষ্ণনগর শহরের অক্সিজেনের অন্যতম ডিলার রাজীব ঘোষ বলছেন, “প্লান্টগুলি উপাদানের অভাবে সে ভাবে অক্সিজেন উৎপাদন করতে পারছে না। ফলে, আমরাও চাহিদা মতো সেখান থেকে অক্সিজেন পাচ্ছি না। নতুন সিলিন্ডারও কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না।”
শহরের আর এক অক্সিজেন ডিলার মৌসুমী ঘোষ বলেন, “আমার কাছে অক্সিজেনের ঘাটতি এখনও তৈরি হয়নি। কিন্তু অক্সিজেন দেওয়ার জন্য আনুষঙ্গিক উপকরণ যেমন রেগুলেটর, ফ্লো-মিটার পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ ওগুলো আসে দিল্লি থেকে। করোনার কারণে সে সব আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যদিও বা পাওয়া যাচ্ছে আড়াই-তিন গুণ দামে কিনতে হচ্ছে।”
এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে একটা বিরাট অংশের মানুষের অক্সিজেন বাড়িতে মজুত করে রাখার প্রবণতাই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে বলে দু’জনই দাবি করেছেন। আর সেই কারণেই তাঁরা চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অক্সিজেন বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।