ফাইল চিত্র।
জেলা বিভাজন হবে ধরে নিয়ে গত সাড়ে তিন মাস ধরে নানা অঙ্ক কষছিলেন নানা দলের নেতারা। এমনকি, কোনও দলের কে কোন জেলায় কী দায়িত্ব পাবেন, তা নিয়েও চলছিল আঁক কষা। পঞ্চায়েত ভোট শিয়রে বলে, সে নিয়ে ভাবনাচিন্তার অন্ত ছিল না। জেলা পরিষদের দায়িত্ব বণ্টন নিয়েও চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছিল শাসক দলের অন্দরেই। কিন্তু সে সব চিন্তায় বৃহস্পতিবার জল ঢাললেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী।জানিয়ে দিলেন, আপাতত ভাগ হচ্ছে না মুর্শিদাবাদ জেলা। উত্তর ২৪ পরগনা ছাড়া ভাগ হচ্ছে না অন্য জেলাগুলিও। কবে জেলা ভাগ হবে বা আদৌ হবে কিনা তাও অনিশ্চিত।
বৃহস্পতিবার নদিয়ার রানাঘাটে সে জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে স্পষ্টতই তা জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলার বিরোধী নেতারা অবশ্য এই ঘটনাকে মুখ্যমন্ত্রীর মিথ্যাচারের আরও একটি দৃষ্টান্ত বলে কটাক্ষ করেছেন।
গত ১ অগস্ট মুখ্যমন্ত্রী হঠাৎই রাজ্যে ৭টি নতুন জেলা গঠনের কথা ঘোষণা করে বড় চমক দিয়েছিলেন। ৬ মাসের মধ্যে নতুন জেলা তৈরির কাজ শেষ করতে সাংবাদিকদের সামনেই মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। সেই সূত্রে মুর্শিদাবাদ জেলাকে ভেঙে কান্দি ও জঙ্গিপুরকে নিয়ে আরও দু’টি জেলা করার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর এই ঘোষণাকে শাসক দল তৃণমূল তো বটেই, স্বাগত জানিয়েছিলেন জেলার বিরোধী দলের নেতারাও। আনন্দের বান ডেকেছিল গোটা মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে। সবুজ আবির ছড়িয়ে উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছিল সেদিন তৃণমূল নেতা ও কর্মীদের। তবে সেদিন বিরোধী নেতারা জেলা ভাগের নোটিফিকেশন জারি না হওয়া পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর মুখের ঘোষণা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর বৃহস্পতিবারের ঘোষণা বিরোধীদের সেই সন্দেহতেই সিলমোহর দিল বলা চলে।
বৃহস্পতিবার রানাঘাটে প্রশাসনিক বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, “জেলা ভাগের কথা আপনি বলেছিলেন। নদিয়া উত্তর, নদিয়া দক্ষিণ। আপনি বলেছিলেন।”তার মুখের কথা কেড়ে নিয়েই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এখন এটা কিচ্ছু হচ্ছে না। যখন হবে তখন বলে দেব। অফিসার্স এখন কম আছে। এখন একটাই জেলা ভাগ করব উত্তর ২৪ পরগনা। এখন সরকারের অত অফিসার নেই। অফিসার না থাকলে জেলা চালাবে কারা? পুলিশ জেলা তো করে দেওয়া হয়েছে। আস্তে আস্তে হবে,যখন লোক পাওয়া যাবে।”
জেলা যে ভাগ হচ্ছে না তা কিছুদিন থেকেই স্পষ্ট হচ্ছিল পঞ্চায়েত নির্বাচনে আসন সংরক্ষণ নিয়ে ঘোষণাতেই। সেখানে জেলা পরিষদে মুর্শিদাবাদে ৭৮টি আসন ধরেই প্রকাশিত হয় খসড়া তালিকা।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা বলেন, “এটা আমরা জানতাম। তিনি জেলা ভাগের কথা বলেছিলেন যখন, তখন চোর ধরো, জেলে ভরো আন্দোলন মাথা চাড়া দিয়েছিল। সেই ইস্যুটাকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য এই ঘোষণা করে চমক দিয়েছিলেন।”কংগ্রেসের জেলার সহ সভাপতি শিলাদিত্য হালদার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী জানতেন জেলা ভাগ করতে পারবেন না। আর একবার প্রমাণ হল তার মিথ্যাচার।” বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাফুজা খাতুনের কটাক্ষ, “তিনি সকালে যা বলেন বিকেলে তা ভুলে যান। জেলা ভাগের কথা বলে চমক দিতে চেয়েছিলেন।”
তৃণমূলের জঙ্গিপুরের জেলা সভাপতি খলিলুর রহমান অবশ্য এখনও জেলা ভাগ নিয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, “আর্থিক ও পরিকাঠামোর সমস্যা তো আছেই। এটা কাটিয়ে উঠেই জেলা ভাগ হবে। হয়ত কিছুটা সময় লাগছে।” সাংসদ আবু তাহের খান এদিন প্রশাসনিক কমিটির বৈঠকে মঞ্চে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ জেলা ভাগের প্রস্তাব বাতিলের কথা মুখ্যমন্ত্রী বলেন নি। এখন আর্থিক সঙ্কট রয়েছে। অফিসারও নেই। তাই আপাতত জেলা বিভাজন স্থগিত রয়েছে। জেলা ভাগ হবে সঙ্কট কেটে গেলেই।’’