—নিজস্ব চিত্র।
সপরিবার তিন দিনের জন্য উত্তরবঙ্গ যাবেন বলে সকাল ৬টা থেকে বহরমপুর জাতীয় সড়কের ধারে বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছিলেন গোরাবাজারের সাহা দম্পতি। বেলা গড়িয়ে ১০টা বাজলেও মেলেনি কোনও বাস। পাঁচ গুণ টাকা খরচ করে গাড়ি ভাড়া করতে হল তাঁদের। কলকাতায় জরুরি কাজ ছিল বহরমপুরের আশিস সাহার। বাস ধর্মঘটের জেরে বিপাকে পড়েন তিনিও।
মুর্শিদাবাদ বেসরকারি বাস পরিবহণ সংস্থার ডাকা ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘটের জেরে কার্যত স্তব্ধ কলকাতা, বীরভূম, নদিয়া, বর্ধমানের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের সঙ্গে জেলার সড়ক পরিবহণ ব্যবস্থা। এক-দু’টি সরকারি বসের দেখা মিললেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অনেক কম। মুর্শিদাবাদ বাস মালিক অ্যাসোসিয়েশন জানিয়ে দিয়েছে, সোমবার সকাল ৬’টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬’টা পর্যন্ত জেলায় বাসের চাকা গড়াবে না। গত শুক্রবার বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
বাস মালিক সংগঠনের দাবি, দীর্ঘ দিন ধরে ভাড়া বাড়েনি বাসের। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আনুষঙ্গিক খরচ। রাশ টানা যায়নি তেল খরচে। রাস্তায় অটো, টোটো, ট্রেকারের দাপটের জেরেও বাসে লোক টানতে সমস্যা হয়। বার বার সে কথা জানানো হয়েছে প্রশাসনকে। বৈঠকও হয়েছে দু’পক্ষের। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। উল্টে লাভের অঙ্ক লাগাতার কমেছে। সংগঠনের সম্পাদক তপন অধিকারী বলেন, “পারমিট না থাকা সত্ত্বেও অটো, টোটো চলছে রাস্তায়। এর ফলে বাসের যাত্রী কমছে। এ সবেরই প্রতিবাদে বাস ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।’’
অন্য দিকে, সাধারণ যাত্রীদের দাবি, বছর দুয়েক আগে যাত্রীদের কাছ থেকে অনুদানের নামে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছিলেন বাস মালিকেরা। আস্তে আস্তে সেই অনুদানের অঙ্কই বাস ভাড়া হয়ে যায়। সোমবার গুরু নানকের জন্মদিন উপলক্ষে সরকারি অফিস ছুটি। তাই সোমবারের বাস ধর্মঘটে সরকারি কর্মীদের অসুবিধা না হলেও বিপাকে পড়েন বাকিরা। প্রশাসনিক সূত্রে দাবি, প্রত্যন্ত এলাকা থেকে যাঁরা চিকিৎসার জন্য বহরমপুরে আসেন, বাস ধর্মঘটের জন্য তাঁরাও সমস্যায় পড়তে পারেন।
মালিকদের ডাকা ধর্মঘটের পক্ষে সওয়াল করেছেন মুর্শিদাবাদ জেলা মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কাস ইউনিয়নের সম্পাদক আনিসুল আম্বিয়া। তিনি বলেন, “এক জন পরিবহণ কর্মীকে টায়ারের দাম, তেলের দাম, বিমার খরচ তুলে দিতে হয় মালিককে। তার পরে যা থাকে, সেখান থেকে সে বেতন পায়। তাই নিজের তাগিদেই তাকে যাত্রী তুলতে হয়। কিন্তু বেআইনি ভাবে সেই যাত্রী তুলে নিয়ে যাচ্ছেন অটো, টোটো চালকেরা।” তাঁর সংযোজন, “ অটো-টোটো চালকেরা এখন নিয়ন্ত্রণহীন। এমনকি বাসের পথ আটকে রাখে যাত্রী তুলতে। অনেক সময় বচসা থেকে হাতাহাতি পর্যন্ত হয় অটো চালক এবং বাসকর্মীদের সঙ্গে। পুলিশ এবং প্রশাসনকে জানিয়ে কোনও লাভ হয় না। সরকার উদাসীন, তাই আমরাও বাসকর্মী হিসেবে এই ধর্মঘটকে সমর্থন করছি।”
মুর্শিদাবাদ জেলার জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র বলেন, ‘‘সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে ধর্মঘটের নামে যাত্রী হয়রানি বরদাস্ত নয়।’’