হাতাহাতি: কৃষ্ণনগর পুরসভা কার্যালয়ের তৃণমূল নেতাদের মারপিট। নিজস্ব চিত্র
সবে এসে পৌঁছেছেন তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। কর্মিসভা তখনও ঠিক মতো শুরু হয়নি। কৃষ্ণনগর পুরসভার সামনে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের উপরে চড়াও হয়ে দলেরই নেতাকে মারধর করলেন কয়েক জন প্রাক্তন কাউন্সিলর।
পুরসভার উপরে দ্বিজেন্দ্রলাল মঞ্চে কর্মিসভার আয়োজন করেছিল তৃণমূল। নীচে তখন ৩২ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা। নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গ পুর কর্মচারী ফেডারেশনের নদিয়া জেলা ইউনিটের সভাপতি, তৃণমূল নেতা সমর চক্রবর্তী।
আচমকা বেশ কয়েক জন প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর আন্দোলনকারী কর্মীদের উপরে চড়াও হন। সমরকে মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারা হয়। ঠেকাতে গিয়ে গুরুতর জখম হন বেশ কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। তাঁদের মধ্যে আছেন ৭৬ বছরের নিমাই ঘোষ। তাঁকেও মাটিতে ফেলে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ঠেকাতে গিয়ে আহত হন আরও কয়েক জন।
নিমাই ঘোষের অভিযোগ, ‘‘ন্যায্য অধিকার নিয়ে আন্দোলন করছি। তার জন্য এ ভাবে মার খেতে হবে ভাবতে পারিনি।’’ মাথায় আঘাত পেয়েছেন তিনি। বলছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সারা জীবন মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই করে গিয়েছেন। আমরা তাঁর একনিষ্ঠ সৈনিক। তাঁর পথে আন্দোলন করতে গিয়ে আজ এ ভাবে আমাদের আক্রান্ত হতে হল! যারা আমাদের মারলেন তাঁরা আদৌ তৃণমূল কি না তা নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে।’’
এই হামলায় অন্যতম অভিযুক্ত, প্রাক্তন কাউন্সিলর মলয় দত্ত এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে গোটা ঘটনায় কার্যত অস্বস্তিতে পড়ে যান তৃণমূল নেতৃত্ব। বৈঠক শেষে রাজীব সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমার এই বিষয়টা জানা নেই। আপনাদের মুখ থেকে শুনছি। ভাল করে খোঁজ না নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।"
শুধু যে বাইরেই তৃণমূলের কোন্দল প্রবল আকার নিয়েছে, তা নয়। তার রেশ ছিল বৈঠকের ভিতরেও। মূলত জেলা পরিষদের সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও সহ-সভাপতি, গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান-উপপ্রধান ও পুরপ্রধানদের বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। যদিও দু’জন বিধায়ক ও জেলা পরিষদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন না। কেন তাঁরা উপস্থিত হননি, রাজীব তা জানতে চান জেলা নেতৃত্বের কাছে। এ বিষয়ে একটা রিপোর্টও দিতে বলেন তিনি।
তেহট্টের জেলা পরিষদ সদস্য টিনা ভৌমিক অভিযোগ করেন, তাঁর এলাকার বিধায়ক কোনও কাজ করলেও তিনি জানতে পারেন না। তাঁকে কিছু বলা হয় না। এক জনকে পাঁচটা পদ দিয়ে রেখেছেন বিধায়ক। ভোটের সময় তাঁদের রাস্তায় নামতে বলা হয় অথচ ভোটের পরে তাঁদের গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তিনি অবশ্য গৌরীশঙ্কর দত্তেপ নাম করেননি। টিনার অভিযোগ, জেলা পরিষদ সদস্য হিসেবে তাঁর কী কাজ, কী দায়িত্ব কিছুই তিনি বুঝতে পারছেন না। কারণ কেউই তাঁর সঙ্গে কোনও আলোচনা করেন না। তাঁর এলাকায় রাস্তা হলেও তাকে না জানিয়েই সবটা করা হচ্ছে। ঠিকাদারকে কিছু বলতে গেলে তিনি দাবি করছেন, যা বলার ‘আসল জায়গায়’ বলে এসেছে। এর পর কোনও ঠিকাদার এই ধরনের কথা বলে তাঁকে বেঁধে রাখবেন বলেও তিনি হুমকি দেন। কর্মাধ্যক্ষরাও তাঁর সঙ্গে কোনও আলাপ-আলোচনা করেন না বলেই অভিযোগ টিনার। তিনি কারও নাম না করলেও অভিযোগের তির জেলা পরিষদের সভাধিপতি রিক্তা কুন্ডুর দিকে বলেই অনেকের ধারণা।
আবার শান্তিপুরের বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন সেখানকার জেলা পরিষদ সদস্য নিমাই বিশ্বাস। তাঁর অভিযোগ, বিধায়ককে মানুষ পায় না। বেলা ১১টার পরে তিনি ঘুম থেকে ওঠেন। তার আগে কোনও ভাবেই তাঁকে পাওয়া যায় না। আবার রাতে পেতে গেলে ১০টার পরে। ফলে সার্টিফিকেট দেওয়ার ব্যাপারে চাপ তাঁর উপর এসে পড়ছে ক্রমশ।
রাজীব অবশ্য পরে দাবি করেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমের লোকেরাই কেবল গোষ্ঠী কোন্দলের কথা বলে। আমি তো এখানে একটাই গোষ্ঠী দেখছি, সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।’’