Death

Death: হাসপাতালে শুয়ে পরীক্ষা দিয়েও পাশ করেছে মৃত ছেলে, বাঁধ মানে না শোক

খুব ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় তুখোড় ছিল রানিনগর সীমান্তের গ্রামের মানব। তাঁর নিজের চোখে যেমন স্বপ্ন ছিল আকাশছোঁয়া।

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

রানিনগর  শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২২ ০৯:০৮
Share:

মানব ঘোষ।

তাঁকে নিয়ে স্বপ্ন ছিল সকলের। উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর জানা গেল সরলাবালা স্কুলের মানব ঘোষ ৪১৩ নম্বর পেয়েছে। আর সেই ফল জানতে পারার পরেই খুশির বদলে চোখে জল এল পরিবার প্রতিবেশী থেকে স্কুলের শিক্ষকদের। কারণ পরীক্ষার তিন দিন পরেই না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন মানব।

Advertisement

অতি দরিদ্র পরিবারে এমন ফলে খুশির বন্যা বয়ে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর পরিবার থেকে স্কুল চত্বরে। কিন্তু না, স্মার্টফোনে তাঁর প্রাপ্ত নম্বর দেখে চোখের জল এসেছে শিক্ষকদের। বুক ফেটে গিয়েছে সীমান্তের গ্রাম মোহনগঞ্জের মেধাবী ওই পড়ুয়া মানবের বাবা-মায়ের।

খুব ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় তুখোড় ছিল রানিনগর সীমান্তের গ্রামের মানব। তাঁর নিজের চোখে যেমন স্বপ্ন ছিল আকাশছোঁয়া। তেমনই তাকে নিয়েও স্বপ্ন ছিল গোটা পরিবার থেকে আত্মীয় এমনকি স্কুলের শিক্ষকদের। রানিনগরের সরলাবালা উচ্চ বিদ্যালয়ের এই ছাত্র স্বপ্ন পূরণ করেছে সবার। জীবনের সঙ্গে লড়াই করে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শেষ পরীক্ষা দেওয়ার পরেও রক্ষা হয়নি তাঁর। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার তিন দিন পরেই মৃত্যু হয় মানবের। আর সেই সঙ্গে মৃত্যু হয়েছে অনেক স্বপ্নের। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার দিন কয়েক আগেই কোমরের নীচে একটি ফোঁড়া হয়েছিল মানবের। গ্রামের হাতুড়ের কাছেই চিকিৎসা চলেছিল তাঁর। অসহ্য যন্ত্রণা নিয়েই পরীক্ষা দিয়েছিল মানব। কিন্তু শেষ পরীক্ষার দিন যন্ত্রণা এতটাই কঠিন হয়ে ওঠে যে তাঁকে শেষ পর্যন্ত রানিনগরের গোধনপাড়া হাসপাতলে ভর্তি হতে হয়। আর হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই পরীক্ষা দিয়ে রেফার হতে হয়েছিল ডোমকল মহকুমা হাসপাতালে। তারপর মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ। কিন্তু সেখান থেকে আর ফেরা হয়নি মানবের। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ফুসফুসে সংক্রমণ থেকেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর।

Advertisement

এলাকার বাসিন্দা থেকে তার পরিবার বলছে, ছেলেটার চোখে অনেক স্বপ্ন ছিল। ইচ্ছে ছিল সরকারি চাকরি করে পরিবারের অনটন মুছে দেবে। মানবের বাবা মানিক ঘোষ বলছেন, ‘‘ছেলেটা মাঝেমাঝেই বলত বাবা, আমি লেখাপড়া করে সরকারি চাকরি করব, তখন তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে না। আর তার জন্যই সে অনেক প্রতিকূলতা থাকলেও জীবনের সঙ্গে লড়াই করে লেখাপড়া করত। এভাবে স্বপ্নভঙ্গ হবে কল্পনাও করিনি।" প্রতিবেশী শাহনাজ পারভিন বলছেন, ‘‘পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার সময় মোটর সিটে বসতে পারেনি, বাইকের পিছনে দাঁড়িয়ে যেত। বেঞ্চে বসেও পরীক্ষা দিতে পারেনি মানব। পরীক্ষা দিয়েছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। আর শেষ পরীক্ষাটা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement