রত্না ঘোষ। নিজস্ব চিত্র।
তিনি ভেঙেছেন, কিন্তু মচকাননি। বরং নিজের এলাকায় গণভিত্তি পোক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। লোকসভা নির্বাচনের আগে চাকদহের বিধায়ক সেই রত্না ঘোষকে মন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত নিল তৃণমূল। বুধবারই তাঁকে দলীয় সূত্রে সে কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও কোন দফতর তিনি পাচ্ছেন, তা জানানো হয়নি।
গত সোমবার রানাঘাট কোর্ট মোড়ে জেলা কার্যালয়ে এক বৈঠকে বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করেন, চাকদহ বিধানসভা এলাকায় তাদের ভাল ফল হবে। তার মাত্র দু’দিনের মধ্যে রত্নার মন্ত্রিত্ব পাওয়ার বিষয়টি সামনে আসায় হিসেব পাল্টে যেতে বাধ্য। এতে চাকদহ তথা রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের ভার যে আগের তুলনায় বাড়বে, তাতে সন্দেহ নেই।
বিজেপির এক কর্মীর ধারণা, “মন্ত্রী হয়ে উনি যে নিজের নির্বাচনী এলাকায় ভাল কাজ করবেন, এটা খুব সাধারণ হিসাব। দলের কর্মীদের কাছেও তাঁর গুরুত্ব বাড়বে।” যদিও বিজেপির দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি জগন্নাথ সরকার দাবি করেন, “কে মন্ত্রী হল, তাতে কিছু যায় আসে না। আমরাই চাকদহ থেকে এগিয়ে থাকব। রানাঘাট লোকসভা আসন দখল করব।”
উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া শ্রীচৈতন্য কলেজে লেখাপড়া করার সময়েই রাজনীতিতে পা রেখেছিলেন রত্না। ছাত্র পরিষদ ও তাদের নিয়ন্ত্রিত ছাত্র সংসদের বিভিন্ন পদের দায়িত্বও সামলেছেন। ১৯৯৬ সালে বিধানসভা ভোটে হরিণঘাটা কেন্দ্র থেকে কংগ্রেস প্রার্থী হয়ে লড়ে সিপিএমের মিলি হীরার কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। কিন্তু রাজনীতি থেকে সরে যাননি। পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী ,হয়ে তৃণমুলে যোগ দেন। নদিয়া জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি ও অন্য পদের দায়িত্ব সামলেছেন। চাকদহের বিধায়ক নরেশচন্দ্র চাকী মারা গেলে ২০১৪ সালের উপনির্বাচনে চাকদহ কেন্দ্র থেকে লড়েছিলেন রত্না। সেই তাঁর প্রথম বার বিধায়ক হওয়া। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ফের ওই কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত। বর্তমানে জেলা মহিলা তৃণমূলের সভাপতিও তিনি।
এ দিন দুপুরে কলকাতা থেকে ফোনে শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে রত্নাকে মন্ত্রী হওয়ার খবর দেওয়া হয়। তার পর থেকেই শুভেচ্ছা জানিয়ে ফোন আসছে। রত্না বলেন, “আমি সব সময়ে মানুষের পাশে থেকে কাজ করেছি। উন্নয়ন করার চেষ্টা করেছি। মন্ত্রী হলেও তার পরিবর্তন হবে না।’’
স্থানীয় বিধায়ক মন্ত্রী হওয়ায় ভাল কাজের আশায় চাকদহের অনেকেই। স্থানীয় সিনিয়র সিটিজেন ফোরামের সভাপতি মনোজ চক্রবর্তী বলেন, “খবরটা শোনার পর বিধায়কের সঙ্গে কথা হয়েছে। আশা করি, এলাকায় ভাল কাজ হবে। উন্নয়ন হবে।” চাকদহ পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলার দিবাকর চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের কাছে খুব ভাল খবর। ওঁর কাছে দাবি একটাই, এলাকার জন্য কাজ করুন।” বর্তমান পুরপ্রধান দীপক চক্রবর্তী অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। রত্না বলেন, ‘‘দিদি আমায় যে দায়িত্ব দেবেন, তা পালন করার চেষ্টা করব।”