বাংলার পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে লোকসভা ভোটের অভিযান কৃষ্ণনগর থেকেই শুরু করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। —নিজস্ব চিত্র।
আবহাওয়ার কারণে কাটছাঁট হয়েছে সফরসূচি। তবে ১৯ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার নির্ধারিত সূচি মেনে নদিয়ার কৃষ্ণনগরের আসছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। বেথুয়াডহরি জুনিয়র ইস্টবেঙ্গল মাঠে সাজো সাজো রব। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক সভা করার পাশাপাশি বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ রাজ্য বিজেপির নেতাদের সঙ্গে আলাদা করে একটি বৈঠকও করবেন নড্ডা। বাংলার পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে লোকসভা ভোটের অভিযান কৃষ্ণনগর থেকেই শুরু করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি।
বিজেপি সূত্রে খবর, বুধবার রাত ১১টা নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছবেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। তাঁকে সেখানে স্বাগত জানাতে উপস্থিত থাকবেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি-সহ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। বিমানবন্দর থেকে নড্ডা চলে যাবেন হোটেলে। এর পর বৃহস্পতিবার ঠাসা কর্মসূচি রয়েছে নড্ডার। সকালেই নড্ডা যাবেন নদিয়ায় ইসকনের সদর দফতর মায়াপুরে। পুজো দেওয়ার পাশাপাশি ইসকনে ভক্ত এবং সন্ন্যাসীদের সঙ্গে মত বিনিময়ের কর্মসূচি রয়েছে।
ইসকন থেকে এর পর সড়কপথে নড্ডা পৌঁছবেন বেথুয়াডহরীর দলীয় জনসভায়। এর পর সেখান থেকে চলে যাবেন নদিয়া জেলা সদর কৃষ্ণনগরে। সেখানে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের রণকৌশল ঠিক করা নিয়ে বৈঠক রয়েছে। কৃষ্ণনগরের বৈঠকে ওই জেলা নেতৃত্বের পাশাপাশি রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্বের উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সেখান থেকে কলকাতা বিমানবন্দর হয়ে আবার দিল্লি চলে যাবেন নড্ডা।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে শুধু কৃষ্ণনগরে নড্ডার সভার পিছনে রয়েছে রাজনৈতিক সমীকরণ। লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটের নিরিখে নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা অপেক্ষাকৃত ভাবে শক্তিশালী সংগঠনের উপর দাঁড়িয়ে থাকলেও নদিয়া উত্তর নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় রাজ্য বিজেপি। তবে নদিয়া উত্তরের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়াই বিজেপির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন দলের একাংশ। পাশাপাশি কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে মতুয়া ভোট ধরে রেখে সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্কে ধস নামানোই হবে বিজেপির লক্ষ্য।
বিজেপি সূত্রে খবর, নদিয়া উত্তরের জন্য পৃথক রণনীতি থাকছে। সে ক্ষেত্রে গোষ্ঠীকোন্দলের বিষয়টিও মাথায় রাখছেন নেতারা। দিলীপ ঘোষ অনুগামী বিজেপি কিষাণ মোর্চার রাজ্য সভাপতি মহাদেব সরকারের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামী জেলা সভাপতি অর্জুন বিশ্বাসের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের কথা অজানা নয় দলের। পঞ্চায়েত ভোটের সে সব মিটিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশাবলী থাকতে পারে নড্ডার ওই বৈঠকে। দলের সর্বভারতীয় সভাপতির সফর নিয়ে রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারের মন্তব্য, ‘‘নদিয়া দক্ষিণে তৃণমূল ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে নদিয়া উত্তর থেকেও তৃণমূলকে সাফ করার দিগ্নির্দেশ করতে জেলায় আসছেন নড্ডা।’’
অন্য দিকে, বিজেপি সভাপতির জেলা সফরকে কটাক্ষ করে কৃষ্ণনগর নদিয়া উত্তর সংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি কল্লোল খাঁ বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যে কোনও রাজনৈতিক দল যে কোনও জায়গায় সভা করতে পারে। তবে সম্প্রদায়িকতার তাস খেলে এ রাজ্যে খুব একটা লাভ হবে না।’’
আপাতত নড্ডার সভার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির নিরাপত্তার বিষয়ে কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার ঈশানী পাল বলেন, ‘‘সর্বোচ্চ শ্রেণির নিরাপত্তা প্রাপ্ত কোনও ব্যক্তির জন্য যে রকম নিরাপত্তার বন্দোবস্ত থাকে, তা-ই থাকবে।’’