প্রতীকী ছবি।
ভোটের বেশ আগে থেকেই নবদ্বীপে বিজেপি হেভিওয়েটদের নিত্য যাতায়াত। নবদ্বীপ থেকেই রাজ্যে ‘পরিবর্তন যাত্রা’র সূচনা।
কিন্তু প্রার্থী কে?
সম্ভাব্য নামাবলি আড়ে-বহরে নেহাত খাটো নয়। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচিত নাম মায়াপুরে ইস্কনের ভক্ত অলয়গোবিন্দ দাস। ইস্কনের বিশ্ব আধ্যাত্মিক মুখ্য কার্যালয় মায়াপুরের ভূমি বিভাগের প্রধান ছিলেন অলয়গোবিন্দ। মায়াপুরে ‘শ্রীচৈতন্য কালচারাল ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টার’ নামে আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র গড়ার জন্য ইস্কনকে সাতশো একর জমি দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অলয়গোবিন্দ সেই ভূমি বিভাগের প্রধান ছিলেন।
লোকে বলে, বিজেপির একাধিক হেভিওয়েট নেতার সঙ্গে নাকি অলয়গোবিন্দের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। অমিত শাহের বাতিল হওয়া মায়াপুর সফরে অতিথি আপ্যায়নে গুরুদায়িত্ব ছিল তাঁর। সম্প্রতি তিনি ইস্কনের ভূমি বিভাগের যাবতীয় দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ায় জল্পনা তুঙ্গে উঠছে। তিনি নিজে অবশ্য সেই জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে বলছেন, “ইস্কনের মতো প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন থাকার কারণে বহু বিশেষ ব্যক্তি বা দল সকলের সঙ্গেই আমার ভাল সম্পর্ক। কিন্তু আমি ভোটে প্রার্থী হচ্ছি না। ব্যক্তিগত কারণে ভূমি বিভাগের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছি। তার সঙ্গে এ সবের কোনও সম্পর্ক নেই।” ইস্কনের জনসংযোগ আধিকারিক রমেশ দাস বলেন, “ইস্কন অরাজনৈতিক সংগঠন। সরাসরি রাজনীতি করতে হলে ইস্কনের সংস্রব সম্পূর্ণ ত্যাগ করতে হবে।”
অলয়গোবিন্দের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা অবশ্য সর্বক্ষণের বিজেপি নেতাকর্মীদের অনেকেরই নাপসন্দ। এ নিয়ে রাজ্যস্তরে আপত্তিও জানানো হয়েছে বলে দলের একাধিক সূত্রের দাবি। বিজেপির উত্তর সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি গৌতম পালের মতে, “দীর্ঘদিন ধরে পরিশ্রম করে দলের নেতাকর্মীরা যে সংগঠন তৈরি করেছেন সেখানে ভোটের মঞ্চে তাঁরা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে দেখতে চান।” দলীয় শৃঙ্খলার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা যে কেউ প্রকাশ করতে পারেন। আমাদের সৌভাগ্য যে মঠ-মন্দিরের শ্রদ্ধেয় মানুষেরা আগ্রহ প্রকাশ করছেন। ঠিক করার দায়িত্ব দলীয় নেতৃত্বের।”
গৌতম নিজেও মায়াপুরের বাসিন্দা এবং গত বিধানসভা ভোটে নবদ্বীপে তিনিই বিজেপির প্রার্থী ছিলেন। তখন বিজেপির পালে ভাগীরথীর হাওয়া ছিল না এবং ১৭৫৩৭টি ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে দৌড় শেষ করেছিলেন তিনি। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে দলের সংযোগ রক্ষার দায়িত্বও তার কাঁধে। প্রায় তিন দশক ধরে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত গৌতম পালের নামও স্বভাবত প্রার্থিপদের জল্পনায় রয়েছে।
বিজেপি সূত্রের খবর, নবদ্বীপ কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার জন্য দলের রাজ্য কার্যালয়ে রাখা ড্রপ বক্সে প্রায় ৩০টি আবেদন জমা পড়েছে। দলের নবদ্বীপ বিধানসভা কেন্দ্রের আহ্বায়ক কমল রায় বলেন, “আবেদন তো যে কেউ করতেই পারেন। তবে আমাদের দল প্রার্থী করার ক্ষেত্রে কয়েকটি জিনিস খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখে। কেউ হঠাৎ এসে আবেদন করল আর ভোটে দাঁড়িয়ে পড়ল এটা সচরাচর হয় না।”
১৯৭৯ সাল থেকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সক্রিয় সদস্য কমল রায়ও আছেন বইকি প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে। শোনা যাচ্ছে প্রবীণ নেতা জীবন সেনের নামও। তিনি বর্তমানে বিজেপির প্রদেশ পরিষদীয় সদস্য, দীর্ঘদিন ধরে মাটি কামড়ে সংগঠন করেছেন। দলের সর্বভারতীয় শিল্পী সংসদের সভাপতি যিনি গত লোকসভা নির্বাচনে তমলুক থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন সেই সিদ্ধার্থ নস্কর নবদ্বীপের বাসিন্দা হওয়ায় তাঁর নামও শোনা যাচ্ছে কোনও কোনও মহলে। নতুন প্রজন্মের নেতাদের মধ্যে উত্তর জেলা সম্পাদক নবীন চক্রবর্তী কিংবা সাধারণ সম্পাদক অপর্ণা নন্দীর নামও ওড়াউড়ি করছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নগর সভাপতি তথা নবদ্বীপ সুদর্শন মন্দিরের শ্রুতিশেখর গোস্বামী প্রার্থী হতে পারেন, এমন জল্পনাও চলে ঘরোয়া চর্চায়।
এই সব নামের পাশাপাশি শোনা যাচ্ছে আরও একটি নাম। নবদ্বীপে খুঁজলে তাঁর নামে লেখা দু’একটা দেওয়াল এখনও পাওয়া যেতে পারে। তিনি তরুণ চিকিৎসক মুকুটমণি অধিকারী। গত লোকসভা ভোটে আইনি জটিলতায় যাঁর প্রার্থিপদ বাতিল না হলে জগন্নাথ সরকারের রানাঘাটের সাংসদ হওয়া হত না। স্বল্প ক’দিনের প্রচারে নবদ্বীপে তাঁকে ঘিরে মানুষের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে মুকুটমণি বলেন, “আমি চাইব, কৃষ্ণগঞ্জে আমার নিজের এলাকায় দাঁড়াতে। তবে দল চাইলে নবদ্বীপেও দাঁড়াতে পারি।”
আর সাংসদ জগন্নাথ বলছেন, “প্রার্থী কে হবেন তা দল ঠিক করবে। তবে চৈতন্য মহাপ্রভুর দেশ নবদ্বীপের সাধু-বৈষ্ণবদের মধ্যে যদি কাউকে দল যোগ্য মনে করে, আমরা সকলে তাঁর হয়েই লড়াই করব।”