প্রতীকী ছবি।
তাঁর ইচ্ছা, বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হবেন। কিন্তু বাদ সাধছিল দলেরই সাংগঠনিক নিয়ম— গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে নির্বাচনে লড়াই করা যাবে না। তাই সাংগঠনিক পদ থেকেই ইস্তফা দিলেন বিজেপির শান্তিপুর বিধানসভা কেন্দ্রের আহ্বায়ক, পেশায় শিক্ষক স্বপন দাস। বুধবারই তাঁর ইস্তফাপত্র গ্রহণ করে নতুন আহ্বায়ককে দায়িত্ব দিয়েছে বিজেপির জেলা নেতৃত্ব।
কখনও বামেদের হাতে, কখনও কংগ্রেস বা তৃণমূলের মতো হাতে গিয়েছে শান্তিপুর পুরসভা। বিধানসভা ভোটেও কখনও বাম, কখনও কংগ্রেস। তবে গত তিন দশক ধরে শান্তিপুরে পুর এলাকা বা বিধানসভা কেন্দ্রে বামেরা জিততে পারেনি। গ্রামীণ শান্তিপুরে পঞ্চায়েত সমিতি এবং কিছু পঞ্চায়েতে অবশ্য নানা সময়ে তারা জিতেছে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে হারার আগে পর্যন্ত ১৯৯১ সাল থেকে শান্তিপুরের বিধায়ক ছিলেন অজয় দে। তিনি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে ২০১৪ সালে উপ-নির্বাচনে জেতেন। এই এক বারই এখানে তৃণমূলের জেতা। ২০১৬ সালে অজয়কে হারিয়ে জিতে যান কংগ্রেসের অরিন্দম ভট্টাচার্য। পরে তিনিও যোগ দেন তৃণমূলে। সেই ভোটে অবশ্য বাম কংগ্রেসের জোট ছিল। ১৯৯০ সালে শান্তিপুর পুরসভায় ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস। দলবদলের পরে ২০১৩ সাল থেকে তা তৃণমূলের। পঞ্চায়েত ভোটে হাতে গোনা কয়েকটি আসন পেলেও এর আগে বিধানসভা এবং পুরসভা ভোটের কোনওটিতেই শান্তিপুরে বিজেপি ছাপ ফেলতে পারেনি।
তবে সেই ছবিই বদলে গিয়েছে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে। সেই ভোটের ফলের নিরিখে শান্তিপুর শহর এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে বিপুল ভোটে এগিয়ে আছে বিজেপি। শান্তিপুর পুর এলাকায় ২৪টির মধ্যে ১৮টি ওয়ার্ডেই এগিয়ে বিজেপি। মোট বিধানসভা এলাকা ধরলে বিজেপি এগিয়ে আছে প্রায় ৩৫ হাজার ভোটে। এর মধ্যে তৃণমূলে বেড়েছে কোন্দল, আবার পুর এবং গ্রামীণ এলাকায় নানা দুর্নীতির অভিযোগেও বিদ্ধ হয়েছে শাসক দল। সব মিলিয়ে শান্তিপুরেও পদ্ম উত্থানের গন্ধ পাচ্ছেন রাজনীতির কারবারিরা। ফলে সেখানে বিজেপি প্রার্থী হওয়ার ঝোঁক বাড়ছেই।
শান্তিপুর শহরের বাসিন্দা, স্থানীয় হিন্দু হাইস্কুলের শারীরশিক্ষা বিভাগের শিক্ষক স্বপন দাসকে বছরখানেক আগে দলের শান্তিপুর বিধানসভার আহ্বায়ক নিযুক্ত করে বিজেপি। রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকারের ঘনিষ্ঠ স্বপন ২০১৭ সাল থেকেই বিজেপির সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছায় বাধা হয়ে দাড়াচ্ছিল দলের সাংগঠনিক বিধি। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিধানসভা কেন্দ্রের আহ্বায়কের পদে থেকে বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হওয়া যাবে না। আর তা জানার পরেই বুধবার দলের জেলা নেতৃত্বের কাছে নিজের ইস্তফাপত্র জমা দেন স্বপন। তাঁর পরিবর্তে চকদিগনগর তারক দাস মেমোরিয়াল হাইস্কুলের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক বাপ্পা হালদারকে আহ্বায়ক পদে নিযুক্ত করেছে বিজেপি।
স্বপন বলেন, “আহ্বায়ক পদে থেকে বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হওয়া যাবে না। আমি তাই পদত্যাগ করেছি। আমাকে প্রার্থী করার জন্য এ বার দলের কাছে আবেদন জানাব।” দলের নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অশোক চক্রবর্তী বলেন, “উনি পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। কারণ কিছু জানাননি। প্রার্থিপদের বিষয়ে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা দল নেবে।”