হামলাতেও ভুল দেখছে না বিজেপি

আয়োজকদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহী কথাবার্তার অভিযোগ তুলে  মঙ্গলবার একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন উৎসবস্থল ঋত্বিক সদনের সামনে গিয়ে হামলা চালায়। নেতৃত্বে ছিলেন এক স্থানীয় বিজেপি নেতা। তাদের দাবি ছিল, নাট্যোৎসব বন্ধ করতে হবে এবং নাট্যচর্চা কেন্দ্রের নির্দেশক কিশোর সেনগুপ্তকে ক্ষমা চাইতে হবে

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কল্যাণী শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:০৬
Share:

প্রতীকী চিত্র।

নির্বিঘ্নেই শেষ হল কল্যাণীর নাট্যচর্চা কেন্দ্র আয়োজিত ২৫তম নাট্যোৎসব। কিন্তু বিজেপির একাংশের নেতৃত্বে এই ধরনের হামলা দলের ভাবমূর্তি কতটা উজ্জ্বল করছে, সেই প্রশ্ন উঠছেই।

Advertisement

আয়োজকদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহী কথাবার্তার অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন উৎসবস্থল ঋত্বিক সদনের সামনে গিয়ে হামলা চালায়। নেতৃত্বে ছিলেন এক স্থানীয় বিজেপি নেতা। তাদের দাবি ছিল, নাট্যোৎসব বন্ধ করতে হবে এবং নাট্যচর্চা কেন্দ্রের নির্দেশক কিশোর সেনগুপ্তকে ক্ষমা চাইতে হবে। পুলিশ এসে তাদের হটিয়ে দেয়। কিশোর জানিয়ে দেন, কোনও দেশবিরোধী কথা তাঁরা বলেননি এবং তার জন্য কারও কাছে ক্ষমা চাওয়ারও প্রশ্ন নেই।

দশ দিনের এই ঐতিহ্যবাহী নাট্য উৎসব ঘিরে বিতর্কের সূত্রপাত গত ২০ ডিসেম্বর। সে দিন বেলঘরিয়া অভিমুখ’ দলের কলাকুশলীরা তাঁদের নাটকের শেষে ‘নো সিএএ, নো এআরসি’ লেখা ব্যানার তুলে ধরেন। আয়োজক সংস্থার কর্ণধার কিশোরও জানান, তিনি সংশোধিত নাগরিক আইন বা জাতীয় নাগরিক পঞ্জির প্রস্তাব সমর্থন করেন না। তার জেরেই তাঁদের আইন অমান্য ও দেশবিরোধী কাজ করার তকমা মেলে। গোটা জেলা জুড়ে নাট্যকর্মী, শিল্পী, সাহিত্যিকেরা হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের এই জুলুমের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। আইনের প্রতিবাদ করা মানেই যে আইন অমান্য করা নয়, সরকারের বিরোধিতা মানে যে দেশবিরোধী কাজ নয়, গণতান্ত্রিক পরিসরে প্রতিবাদ যে সাংবিধানিক অধিকার, হিন্দুত্ববাদীরা যে ইচ্ছাকৃত ভাবে বিষয়গুলি গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, সে কথাই তাঁরা একযোগে বলেছেন।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সেলিনা খাতুন বলেন, ‘‘সংবিধান যে স্বাধীনতা দিয়েছে, ওরা ভয় দেখিয়ে তা খর্ব করতে চাইছে। আসলে দেশ জুড়ে প্রতিবাদ দেখে ওরাই ভয় পেয়ে গিয়েছে। যারা হামলা করেছে, তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।’’ তবে এ দিন পর্যন্ত কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্রের তরফে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।

কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্রের পরিচালন সমিতির সদস্য দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘হামলার সময়ে পুলিশ খুব ভাল ভূমিকা পালন করেছে। নতুন করে আমরা আর অভিযোগ করিনি। আজ উৎসবের শেষ দিন আমরা সবাই নানা কাজকর্ম নিয়েই ব্যস্ত।’’

তবে কল্যাণী শহরের বাসিন্দা, বিজেপির নদিয়ার দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সদ্য অপসারিত সভাপতি মানবেন্দ্রনাথ রায় অবশ্য এর মধ্যে হিন্দুত্ববাদী বা তাঁদের দলের কোনও নেতার কোনও দোষ দেখছেন না। যে যাই বলুক, সমস্ত যুক্তি অগ্রাহ্য করে তিনি সেই একই কথা আউড়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘সংসদের তৈরি আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কেউ আদালতে যেতেই পারেন। তা না করে নাট্যচর্চার আড়ালে যা করা হচ্ছে তা সংসদের অবমাননা। তাই হিন্দু সমাজের প্রতিবাদের মধ্যে কোনও ভুল নেই।’’

সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে পাল্টা বলেন, ‘‘সংসদ সংবিধান বিরোধী আইন তৈরি করলে নাগরিক সমাজ তার বিরোধিতা করবেই। তা ছাড়া, এনডিএ-র অনেক ছোট শরিক এই আইনের বিরোধিতা করছে। কই, বিজেপি তো তাদের জোট থেকে বার করে দিচ্ছে না? আর মানুষ প্রতিবাদ করলেই দেশদ্রোহী বানাতে চাইছে। এটা কি ভাবের ঘরে চুরি নয়?’’

তৃণমূলের কল্যাণী শহর সভাপতি অরূপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মোদী সরকারের বিরোধিতা করা মানেই কি দেশবিরোধী কাজ? মাত্র ৩৭ শতাংশ ভোট পেয়ে ক্ষমতায় আসা বিজেপিই গোটা দেশ? কোন সাহসে ওরা একটা কালা আইন করে নাগরিকের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করছে? কল্যাণীর মানুষ এটা মানবে না। নাট্যশিল্পীরা যা করেছেন, ঠিক করেছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement