ফাইল চিত্র।
দু’বছর আগের বিকেলে খবরটা শোনার পরেই বহরমপুর শহরের কংগ্রেস কার্যালয়ে সন্ধ্যের মুখেই আলোগুলো টুকটুক করে নিভে গিয়েছিল। সেটাও ছিল সেপ্টেম্বর। এলোমেলো জল অনেক গড়ানোর পরে সেই সেপ্টেম্বরেই পুরোনো পদে ফিরলেন বহরমপুরের সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী। খবরটা তিনি নিজেও জানতেন না। বুধবার দিল্লি রওনা হওয়ার পথে কলকাতা পৌঁছে দিল্লির আকবর রোড থেকে ফোন পাওয়ার পরে রাতের উড়ানে আর ভেসে পড়া হয়নি। কলকাতাতেই রাত কাটিয়ে আজ বৃহস্পতিবার বিধানভবনে প্রদেশ সভাপতির পুরোনো চেয়ারে বসে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, নিভু নিভু সংগঠনকে নতুন করে চাঙ্গা করাই তাঁর প্রথম কাজ। তাঁর আঁচ যে বহরমপুর উজিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলাতেও ছড়িয়েছে জেলার আনাচ কানাচে কংগ্রেসের বিভিন্ন পার্টি অফিসে রাততক আলো জ্বলা দেখে তা মালুম হচ্ছে। ক’দিন আগেও জেলার প্রান্তিক যে সব পার্টি অফিসগুলি করোনা ভয়ে খিল এঁটেছিল এদিন সকাল থেকেই সেগুলি খুলতে দেখা গিয়েছে। ধুলো ঝেড়ে গোল করে চেয়ার সাজিয়ে সস্তা চায়ের কাপ হাতে সাধারণ কংগ্রেস কর্মীদের ভিড়ও চোখে পড়েছে। কংগ্রেস কর্মীদের বলতে শোনা গেছে ‘এবার দেখ কেমন লাগে।’ জেলা কংগ্রেসের এক সাধারণ সম্পাদক মহঃ জহর বলছেন, “হাইকমান্ডের এই সিদ্ধান্তের পরে অধীরদা ফিরে এল। এবার দেখুন কংগ্রেস কর্মীরা কি করে ঝাঁপায়। সোনিয়াজিকে সেলাম।” বহরমপুর টাউন কংগ্রেসের সভাপতি কার্তিক সাহা একধাপ এগিয়ে বলছেন, “তৃণমুলকে ফাইট দেওয়ার একমাত্র মুখ অধীর। এ বার করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে।”
বস্তুত এই জোশটাই চাইছিলেন অধীর। পদ পাওয়ার সঙ্গে তা যে কিঞ্চিত ফিরেছে একদিনেই তা মালুম হচ্ছে। দু’বছর আগে তাঁকে সরিয়ে সোমেন মিত্রকে প্রদেশ সভাপতি করার পরে খারাপ যে তার লেগেছিল আলগোছে তা মেনেও নিয়েছেন অধীর। বুধবার রাতেই তিনি জানিয়েছিলেন, “দু’বছর আগে আমাকে সরিয়ে দেওয়ার পরে মনখারাপ যে হয়নি তা নয় তবে এক সময় সোমেন দা’র কাছেই তো রাজনীতি শিখেছি তাই মেনে নিয়েছিলাম।”
অধীরের প্রত্যাবর্তনে সবাই যে দশে দশ দিচ্ছেন, এমন অবশ্য নয়। প্রদেশ নেতাদের অনেকেরই তাঁর নেতৃত্বে চাপা অনীহা রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন অধীরের ‘মুর্শিদাবাদ মডেল’ সারা রাজ্যের ক্ষেত্রে তেমন কার্যকরী নয়।
সে বিতর্কের জন্য আগামী দিন পরে আছে। আপাততঃ কংগ্রেসের উঠে দাঁড়ানোর মুখ যে অধীর দলের অধিকাংশই তা মেনে নিয়েছেন। সত্যিই কংগ্রেস যে কতটা উঠে দাঁড়াতে পারে তার উত্তর একদা কংগ্রেসের গড় মুর্শিদাবাদই দেবে কি না সময়ই সে সময়ই কথা বলবে।