সুতপা চৌধুরীর উপর নজরদারি করার কথা স্বীকার সুশান্ত চৌধুরীর। —নিজস্ব চিত্র।
পুলিশি জেরার সামনে নিজের ‘অটুট’ মেজাজ ধরে রাখতে পারল না বহরমপুরের কলেজপড়ুয়া সুতপা চৌধুরী খুনে অভিযুক্ত সুশান্ত চৌধুরী। মঙ্গলবার আদালত তাকে ১০ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। তার পর থেকেই মুখে কুলুপ এঁটেছিল সুশান্ত। কিন্তু লাগাতার পুলিশি জেরায় সেই বাঁধ ভেঙে গেল। বেরিয়ে এল একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। কয়েকশো কিলোমিটার দূরে থেকেও সে সুতপার উপর কী ভাবে নজরদারি চালাত সেই ‘কৌশল’ও তদন্তকারীদের জানিয়ে দিয়েছে সুশান্ত।
মালদহের ইংরেজবাজারের বাড়ি থেকে বা পটনায় বসে সকলের অলক্ষ্যে সুতপার উপর লাগাতার নজরদারি চালিয়ে যেত সুশান্ত। খুনের আগের দিন পর্যন্ত এ ভাবেই সুতপাকে ‘ট্র্যাক’ করেছে সে। সুতপা কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, কার সঙ্গে মিশছে, কার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে ইত্যাদি খবর পেতে তাঁরই এক বান্ধবীকে ‘সোর্স’ হিসাবে ব্যবহার করত সুশান্ত। তদন্তকারীদের দাবি, পুলিশি জেরায় এমনটাই জানিয়েছে সে। এক তদন্তকারী জানিয়েছেন, সুশান্ত জেরায় বলেছে, ‘‘সুতপার গতিবিধির উপর নজরদারি রাখতে ওরই এক বান্ধবীর সঙ্গে আমি নিয়মিত যোগাযোগ রাখতাম।’’
জেরায় সুশান্ত পুলিশকে জানিয়েছে, সপ্তাহখানেক আগে সেই ‘সোর্স’ মারফত সে খবর পায়, সুতপা তাঁর নতুন প্রেমিকের সঙ্গে বার কয়েক শপিংয়ে গিয়েছেন। এর মধ্যেই ‘সোর্স’ মারফত খবর পায়, ‘নতুন প্রেমিক’-এর সঙ্গে সুতপা সিনেমাও দেখতে গিয়েছিলেন। তদন্তকারীদের দাবি, জেরার সময় যখন সুশান্ত এ সব কথা বলছে, তখন তার শরীরী ভাষায় সুতপা সম্পর্কে ঘৃণা এবং প্রতিহিংসা ফুটে উঠেছে। জেরায় সুশান্ত জানিয়েছে, নতুন প্রেমিকের সঙ্গে শপিংয়ে যাওয়া বা সিনেমা দেখতে যাওয়ার কথা ‘সোর্স’ মারফত পেয়ে তার ‘সহ্যের বাঁধ’ ভেঙে গিয়েছিল। জেরায় সে বলেছে, ‘‘ওর সঙ্গে এত মাখামাখি আর আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। ও মরেছে এটা কনফার্ম তো?’’
সুশান্তই যে সুতপাকে খুন করেছে, সে বিষয়ে তদন্তকারীরা এক প্রকার নিশ্চিত। কারণ, তার বড় প্রমাণ মিলেছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে। রয়েছেন একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীও। কিন্তু তার পরেও গোটা বিষয়টি কী ভাবে ঘটল, কেন সুতপার উপর সুশান্তের এমন আক্রোশ, বহরমপুরের বাসিন্দা না হয়ে দূরে বসে সে কী ভাবে সুতপার খবরাখবর রাখত ইত্যাদি নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা। তদন্তকারীদের দাবি, বুধবার জেরায় যে কথা সুশান্ত স্বীকার করেছে তাতে তদন্তের বেশ কয়েকটা ধাপ পেরোনো গিয়েছে একলহমায়।