বহরমপুর পুরসভা
বহরমপুরের মধ্যে যেন একরকম লুকিয়ে রয়েছে আর একটা শহর। যার অলিতে গলিতে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দিন কাটান কয়েক হাজার পরিবার। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সূর্যের আলো খেলে না এক কামরার সেই কুঠুরিগুলোতে। হাঁটা পথের ধারেই ফুটন্ত ভাতের গন্ধের পাশাপাশি ভেসে আসে পাশের বাড়ির শৌচাগারের গন্ধ। বর্ষা আসলেই ঘরের আবর্জনা, শৌচাগারের মলমূত্রের গন্ধে জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে তাঁদের। অথচ এই পরিবারের সাবালক নারী পুরুষ সকলেই বহরমপুর পুরসভার ভোটার। পঞ্চাশ বছরের উপরে সরকারি জমিতে বসবাস করে সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভাবে নিজেরাই বাড়ি বানিয়ে গড়ে তুলেছেন এক একটা কলোনি। ভোট আসে ভোট যায়। প্রতিশ্রুতির ডালি নিয়ে নেতারা ভোট চাইতে আসেন নিয়ম করে। কিন্তু এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এখানে তাঁদের স্থায়ী বসবাস করে দেওয়ার কথা রাখেনি কোনও নেতা। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নবকুমার দাস বলেন, “জ্ঞান হওয়া ইস্তক ৪০ বছর এখানে কাটল, কেউ কথা রাখেনি।”
বহরমপুরের উত্তর দিকের কাশিমবাজার ১ নম্বর ওয়ার্ডের শর্মাপাড়ার কাছে কারবালা রোডের রেলবস্তি, ২ নম্বর ওয়ার্ডের রানি বস্তি, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গির্জাপাড়া, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ৮৪ পাড়া, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কপিলের মাঠের বস্তি, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাছে মধুপুর বস্তি, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ডোমপাড়া, ভাগীরথীর পূর্বপাড়ের বস্তিতেই পুরসভার ১৩ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড। ২০ নম্বর ওয়ার্ডের অম্বেডকর পল্লি, নতুন পাড়া, সুভাষ কলোনি, জগন্নাথঘাট বস্তি, গাঁধী কলোনিতেও ২১ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ড, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সুভাষপল্লি, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের হরিজন পল্লি মিলিয়ে বহরমপুর পুরসভার হাজার পনেরো পুরভোটার রয়েছেন। কিন্তু কোথাও পানীয় জলের পাকা ব্যবস্থা করা হয়নি। ২১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রতিমা শিল্পী সুভাষ দাস বলেন, “গ্রীষ্মের সময় এখানে পানীয় জলের সমস্যা হয় খুব।” কিছু রাস্তা ঢালাই হলেও বেশ কিছু রাস্তায় এখনও বৃষ্টিতে কাদা জল ভেঙেই ঘরে ঢুকতে হয়।
নিকাশিনালার ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষার সময় এলাকায় জল দাঁড়িয়ে যায়। রয়েছে শৌচাগারের সমস্যা। এলাকায় পুরসভা থেকে সাধারণের ব্যবহারের জন্য শৌচাগার তৈরি করা হয়েছে। গাঁধী কলোনির এক বাসিন্দা বলছেন, “শৌচাগার তৈরি করেই দায় সেরেছে পুরসভা। নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার লোক নেই।” হরিজন পল্লির এক বাসিন্দাদের অভিযোগ, “পুরসভা হাজার টাকা নিয়ে যে শৌচাগার তৈরি করেছে তা কখন ভেঙে যাবে সেই চিন্তা থাকে।” প্রাক্তন উপপুরপ্রধান জয়ন্ত প্রামানিক বলছেন, “সরকারি জায়গায় যারা বসবাস করছেন, তাঁদের পাট্টা দেওয়ার কথা তো রাজ্য সরকারই বলছে। সময় হলে তাঁরাও সেই পাট্টা পাবেন।”