অন্য ভোট

‘নিজের ভোট এ বারও নিজেই দেব’, শতবর্ষ পার করেও অবিচল বৃদ্ধ

তিনি একশো চার। গত বছর তাঁর জন্মদিন পালনের সময়ে নিজেই নারকেল ফাটাতে চেয়েছিলেন বলে দরজার পাশ থেকে ফুট কাটছেন হরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের ছোট মেয়ে।

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক

করিমপুর শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৮ ০১:০০
Share:

হরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র

উঠোনের কোণে লকলক করছে লাউ মাচা। পাঁচিল জুড়ে সবুজ পুঁই চারা। খোড়ো চালের গোয়ালের পাশে ঘন নিমের ছায়া। চেয়ারটা নিজেই টেনে নিয়ে সেই ছায়ায় বসে বলছেন, ‘‘রোদ্দুরে বড় আঁচ বাপু, এ আর সহ্য হয় না।’’

Advertisement

তবে, পুঁই-লাউ গোয়ালের গরু, সবই তাঁর তত্ত্বাবধানে দিব্যি তর তর করে বাড়ছে। এক ঘটি জল ঢকঢক করে গলায় ঢেলে বৃদ্ধ জুড়ে দিচ্ছেন, ‘‘কী ওদের মতো আমিও তো দিব্যি তরতাজাই না কি!’’

তিনি একশো চার। গত বছর তাঁর জন্মদিন পালনের সময়ে নিজেই নারকেল ফাটাতে চেয়েছিলেন বলে দরজার পাশ থেকে ফুট কাটছেন হরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের ছোট মেয়ে।

Advertisement

আর যাই হোক, ভিটেহারা হরেনবাবু যে তাঁর পুরনো তেজ পুব বাংলায় ফেলে আসেননি নির্বাচনের কথা উঠতেই তা স্পষ্ট করে দিচ্ছেন, ‘‘যত গন্ডগোলই হোক, নিজের ভোট এ বারও নিজেই দেব।’’

শতবর্ষ ধরে এ ব্যাপারে তার অন্যথা হয়নি। ১৯৪৭ সাল থেকে লোকসভা, বিধানসভা, পঞ্চায়েত, গ্রামসভা —যে কোনও ভোটেই নিজেই সাংবিধানিক অধিকার নিজেই হেঁটে গিয়ে দিয়ে এসেছেন তিনি। বলছেন, ‘‘এ বারই বা তা অন্য রকম হবে কেন!’’ জানিয়ে রাখছেন, দেশ ছেড়ে আসার যন্ত্রণাটা এ বাবেই পুষিয়ে নিচ্ছেন তিনি। বাড়ির উঠোনে চেয়ারে বসে তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক দেশে ভোট মানুষের স্বাধিকার। নির্বাচনে কে কাকে সমর্থন করবে সবটাই নিজস্ব মত। সেটা যে করেই হোক নিজেই দিতে হবে।’’

হরেন্দ্রনাথের দুই স্ত্রী, মনমতী আর মাণিক্য বিশ্বাস। তাঁদের পাঁচ মেয়ের মধ্যে চার জনকেই বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলেও সাবালক। ছোট ছেলে দেবকুমার বলছেন, “গত পয়লা বৈশাখ বাবার ১০৪ তম জন্মদিন পালিত হয়েছে। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি সক্রিয় ভাবে না করলেও রাজনীতি নিয়ে সচেতন। এই বয়সেও কারও সাহায্য ছাড়া নিজের ভোট নিজে দেন।’’ তবে, হালের ঘাত-আঘাতের আবহ বড় ক্লান্ত করেছে তাঁকে। বলছেন, ‘‘পুব বাংলার ভিটে ছাড়ার সময়ে যে হনন উল্লাশ দেখেছি— এ যেন সেই সব দিন ফিরে এল, সেই চেনা শাসানি।’’

শতবর্ষের দিনযাপনে এই বারুদ-গন্ধী আবহে যেন পুরনো ছিন্নমূল জীবনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে হরেন্দ্রনাথের। তবু, এখনও তাঁর অদম্য জীবনী শক্তি। বলছেন, ‘‘দেখি না, নিজেকে টেনে হিঁচড়ে কত নির্বাচন পার করতে পারি!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement