চিকিৎসা চলছে কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে। —নিজস্ব চিত্র
নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে আন্দোলন, কর্মবিরতির জট কাটিয়ে রাজ্যের অন্য মেডিক্যাল কলেজগুলির সঙ্গে মঙ্গলবার ছন্দে ফিরেছে কল্যাণী জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালও।
এ দিন সকাল ৯টাতেই খুলে দেওয়া হয় আউটডোর। যত বেলা বেড়েছে তত লাইনে ভিড় বেড়েছে। বেলা বারোটার মধ্যে ৬০০-র বেশি রোগী আউটডোরে পরিষেবা নেন। সকাল ১০টা নাগাদ আউটডোরে গিয়ে দেখা গেল, মেডিসিন থেকে শুরু করে সব বিভাগেই চিকিৎসকেরা নির্দিষ্ট ঘরে রোগী দেখছেন। রোগীদের চোখেমুখে স্বস্তির ছাপ।
হাঁসখালি থেকে এসেছিলেন রবীন বিশ্বাস। পেটের ব্যথায় বেশ কয়েক দিন ধরেই ভুগছেন। স্থানীয় হাসপাতাল থেকে তাঁকে বলা হয়েছিল, জেএনএমে দেখাতে। মাঝে এক দিন এসে ঘুরে গিয়েছেন। আন্দোলনের জন্য আউটডোর বন্ধ ছিল। কর্মবিরতি উঠে যাওয়ার খবর জেনে মঙ্গলবার সাতসকালে ট্রেন ধরে চলে এসেছেন হাসপাতালে। বললেন, ‘‘বাঁচলাম। সরকারি হাসপাতাল বন্ধ থাকলে আমাদের মতো নিম্ন মধ্যবিত্তদের খুব সমস্যা।’’ সোমবার বিকেলে দুর্ঘটনায় পায়ে চোট পান কল্যাণীর দু’ নম্বর বাজারের চা বিক্রেতা আশা দাস। তাঁর কথাতেও, ‘‘সরকারি হাসপাতাল বন্ধ থাকলে আমাদের মতো মানুষের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ, বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তির হওয়ার মতো টাকা আমাদের নেই।’’ তবে চিকিৎসকেরাই জানালেন, এদিন আউটডোরে আশানরূপ রোগী হয়নি।
কর্মবিরতি চলাকালীন জেএনএমের ওয়ার্ডগুলি ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। মেডিসিন ও শল্য বিভাগে এমনিতেই শয্যার তুলনায় বেশি রোগী ভর্তি থাকেন। সে সব ওয়ার্ড এত দিন কার্যত ফাঁকা ছিল। এ দিন সকাল থেকেই সেখানে নার্স, আয়া, চিকিৎসসকের ভিড়। জরুরি বিভাগ থেকে একে-একে বহু রোগীকে পাঠানো হয় বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তির জন্য। হাসপাতালের সুপার অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ দিন বিকেল পর্যন্ত প্রায় একশো জন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন। ওয়ার্ড আবার আগের মতো গমগম করছে।
জেএনএমের ইন্টার্নদের তরফে মেহেদি হাসান মোল্লা বলেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম রাজ্য সরকার আমাদের দাবিগুলি যাচাই করে দেখুক। তা হওয়ার এ দিন কাজে যোগ দিয়ে খুব ভাল লাগছে। রোগীদের বিপদে ফেলতে কোনও চিকিৎসকই চান না।’’ দিন কয়েক আগে অচলাবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন হাসপাতালের অন্যতম শল্য চিকিৎসক সুবিকাশ বিশ্বাস। তাঁর কথায়, ‘‘চিকিৎসকেরা চিকিৎসা করবেন এটাই তো স্বাভাবিক ঘটনা। কাজে ফিরে মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার থেকে আনন্দের আর কিছুই হতে পারে না।’’
গত কয়েকদিন ধরেই জেলার এই একমাত্র মেডিক্যাল কলেজে পরিষেবা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলেছে। দূরদূরান্ত থেকে এসে চিকিৎসা না-পেয়ে ফিরতে হয়েছে অনেককে। ধৈর্যের বাঁধ ভাঙায় অনেকে রাস্তা অবরোধও করেছেন। দফায় দফায় তর্কাতর্কি, হাতাহাতি হয়েছে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে। জুনিয়র ডাক্তারদের অধিকাংশই গোলমালের জেরে হস্টেল ছেড়ে চলে যান। এ দিন থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর তাঁরাও ফিরতে শুরু করেছেন।
এ দিন শক্তিনগর-সহ জেলার অন্য হাসপাতালগুলিতে আউটডোরে চিকিৎসা নির্বিঘ্নে হয়েছে। রানাঘাট হাসপাতালে এসেছিলেন ন’পাড়ার বাসিন্দা বছর পঞ্চাশ বয়েসের আরতি ঘোষ। বলেন,“গত কয়েক দিন থেকে সকলের মুখে শুনতে পারছি, হাসপাতালের আউটডোর বন্ধ রয়েছে। কিন্তু কয়েক দিন ধরে মাজায় অসম্ভব যন্ত্রণা হচ্ছে। ডাক্তার না দেখালে আর নয়। তাই, ভবালাম এক বার অবস্থা দেখে আসি। যদি চিকিৎসা পাওয়া যায়। কপাল ভাল যে, এসে শুনি সব ঠিক হয়ে গিয়েছে।” তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে ধানতলার বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর আক্রম মণ্ডল বলেন, “হাসপাতাল বন্ধ থাকলে আমাদের মতো গরিব মানুষ কোথায় যাবে বলতে পারেন?’’ হাসপাতালের সুপার সুদীপকান্তি সরকার বলেন, “সকাল থেকেই রোগীদের ভিড় ছিল। এ দিন প্রায় সাড়ে ছ’শো মানুষ আউটডোরে দেখিয়েছেন।”