প্রতীকী চিত্র।
সলতেটা পাকানো হচ্ছিল বৃহস্পতিবার রাত থেকে। শুক্রবার দুপুরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের গণ ইস্তফা জমা পড়ল। এ দিন রাত পর্যন্ত প্রায় ৪২ জন চিকিৎসক গণ ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছেন। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ দেবদাস সাহা বলছেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সব বিভাগ মিলিয়ে চিকিৎসকের সংখ্যা প্রায় ২০০ জন। তার মধ্যে বিভিন্ন বিভাগের ৪২ জন চিকিৎসক তাঁদের লিখিত ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছেন। আমি ওই ইস্তফাপত্র স্বাস্থ্যভবনে পাঠিয়ে দেব।’’
এক সঙ্গে এত জন চিকিৎসক চাকরি থেকে ইস্তফা দিলেও চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধে হবে না বলেই সুপারের দাবি। এত দিন চিকিৎসা পরিষেবা দিলেও আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতি তাঁদের নৈতিক সমর্থন ছিল। এ বারে এনআরএসের ঘটনায় গণ ইস্তফা দিয়ে আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়ালেন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একদল সিনিয়র চিকিৎসক তথা অধ্যাপক-চিকিৎসকেরা।
মঙ্গলবার থেকে এনআরএসের ঘটনার প্রতিবাদে ও নিজেদের নিরাপত্তার দাবিতে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারেরা কর্মবিরতি শুরু করেন। সেখানে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা তৃণমূল সভাপতি আবু তাহের খান দলবল নিয়ে যান। অভিযোগ জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান তুলে নেওয়ার জন্য তৃণমূল নেতৃত্ব হুমকি দেন। পরে নেতারা চলে গেলে ওই রাতেই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ-সহ বিভিন্ন সিনিয়র চিকিৎসকেরা বৈঠকে বসেন। প্রায় দু’ঘণ্টার আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় জুনিয়র ডাক্তারেরা কর্মবিরতি চালানোয় বহির্বিভাগ বন্ধ থাকবে। কিন্তু সিনিয়র চিকিৎসকেরা জরুরি পরিষেবা চালু রাখবেন। কিন্তু কোনও ভাবে জুনিয়র ডাক্তারদের উপরে আক্রমণ নেমে এলে তাঁরা গণ ইস্তফা দেবেন। তার ১২ ঘণ্টার মধ্যে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসকেরা গণ ইস্তফা দিলেন।
মেডিক্যাল কলেজের মনোরোগ বিভাগের প্রধান রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এনআরএসের ঘটনার প্রতিবাদে ইস্তফা দিয়েছি।’’ অর্থো-সার্জারি বিভাগের শল্য চিকিৎসক অভিজিৎ রায় বলছেন, ‘‘যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? তাই গণ-ইস্তফা দিয়েছি।’’
অর্থোপেডিক বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসক এ কে বেরা বলছেন, ‘‘জুনিয়র ডাক্তারদের হুমকি দেওয়ায় সকলে মিলে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখনও যাঁরা ইস্তফাপত্রে সই করেননি তাঁরা জেলার বাইরে আছেন বা ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে সই করতে পারেননি। তবে তাঁরা নীতিগত ভাবে ইস্তফা দেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন। আশা করছি সকলেই ইস্তফা দেবেন।’’
এ দিন সন্ধ্যায় মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক জগদীশ প্রসাদ মিনা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন।