জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান বিক্ষোভ। রবিবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
চেনা প্রতিবাদে অচেনা পদক্ষেপ!
অবস্থান মঞ্চ থেকে পালা করে গিয়ে রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা করছেন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারেরা। রবিবার দুপুর থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কাছে টেবিল-চেয়ার পেতে জুনিয়র ডাক্তাররা ‘রোগী পরিষেবা কেন্দ্র’ খুলে রোগী দেখছেন।
এ ছাড়াও যে সব পরিষেবা চালু রয়েছে সে বিষয়ে এ দিন দুপুরে তাঁরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে পোস্টার লাগিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে, ‘গুজবে কান দেবেন না। হাসপাতালে জরুরি বিভাগ, ব্লাড ব্যাঙ্ক, শিশু বিভাগ, প্রসূতি বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটার চালু রয়েছে।’
‘জরুরি পরিষেবা কেন্দ্র’ থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের পক্ষে আব্দুল আজিজ বলেন, ‘‘নিরাপত্তার দাবিতে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। যতক্ষণ না দাবি মিটছে ততক্ষণ আন্দোলন চলবে। তবে মানুষের অসুবিধার কথা ভেবে আমরা রোগী পরিষেবা কেন্দ্র চালু করেছি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জরুরি বিভাগের কাছে পালা করে ছ’জন জুনিয়র ডাক্তার রোগী দেখবেন।’’
কোনও রকম চাপ থেকেই কি এই সিদ্ধান্ত? আব্দুল আজিজ বলেন, ‘‘কোনও চাপ নয়। আমরা মানুষের সঙ্গে আছি। তাদের সাহায্য করতে এই সিদ্ধান্ত।’’
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ মঞ্জু বন্দোপাধ্যায় শনিবার রাতে কলেজে যোগ দিয়েছেন। রবিবার সকালে তিনি জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেন। আন্দোলনকারীরা অধ্যক্ষকেও জানান, তাঁরা মঞ্চ ছেড়ে জরুরি বিভাগের সামনে গিয়ে পালা করে চিকিৎসা করবেন। অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘এখানে জরুরি ও অন্তঃবিভাগ চালু রয়েছে। সিনিয়র চিকিৎসকরা চিকিৎসা করছেন। জুনিয়র ডাক্তারেরা মানুষের কথা ভেবে জরুরি পরিষেবা কেন্দ্র খুলে চিকিৎসা করছেন।’’
শনিবার দুপুরে মেডিক্যালে বহরমপুরের ন’পাড়ার এক মহিলার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দেয়। অভিযোগ, চিকিৎসক ও নার্সদের মারধরের চেষ্টাও করেন রোগীর বাড়ির লোকজন। তবে মৃতের বাড়ির লোকজন ময়নাতদন্ত করাতে চাননি। এমএসভিপি দেবদাস সাহার দাবি, ‘‘ওঁরা লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, তাঁদের কোনও অভিযোগ নেই।’’ ওই ঘটনায় নিরাপত্তারক্ষীদের দিকে আঙুল তুলেছেন মেডিক্যালের অধ্যক্ষ। তিনি বলেন, ‘‘এখানেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভাল নেই। শনিবার ওয়ার্ডের ভিতরে কী করে রোগীর বাড়ির এত লোকজন ঢুকে পড়লেন? বিষয়টি আমরা স্বাস্থ্য দফতরে জানিয়েছি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘শনিবার ওই রোগীকে শেষ মুহূর্তে আনা হয়েছিল। গাফিলতির অভিযোগ ঠিক নয়।’’
৩৩ একর এলাকা নিয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ। বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা ১০৫ জন। আরও ২৩২ জন নিরাপত্তারক্ষীর দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য ভবনে আবেদন করা হয়েছে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে আজ, সোমবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে বৈঠক হওয়ার কথা।
গ্রামীণ চিকিৎসক, নার্স, ফার্মাসিস্টদের সংগঠন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের এক প্রতিনিধিদল আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে কাজে ফেরার আবেদন জানিয়েছে।