প্রতীকী ছবি।
কোথাও সশব্দে কোথাও বা নিশ্চুপে, দখলদারি চলছেই।
পদ্মার ভাঙনে সীমান্ত থেকে সরে এসেছিল বিএসএফ। তবে সময়ের হাত ধরে নদী ফের খাত বদলে সরে গিয়েছে কিন্তু বিএসএফের ক্যাম্প সরেনি। ফলে সীমান্তে কয়েক হাজার একর প্রায় অরক্ষিত জমি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে মুর্শিদাবাদের ডোমকল মহকুমার সীমান্ত জুড়ে।
স্থানীয় আবাদি মানুষের অভিযোগ, বিএসএফের বাধায় ওই বিস্তির্ণ এলাকায় চাষ করতে যাওয়া সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, আর সেই সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশি গাঁ-গঞ্জ থেকে অনুপ্রবেশকারীরা প্রায় বিনা বাধায় জমি দখল করে চলেছে। ভারতীয় চাষিদের ওই জমিতে চাষ করাই লাটে উঠেছে। অনেক সময়ে মাঠ থেকে তাঁদের তুলে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখার অভিযোগও মিলেছে। সীমান্তে রানিনগর ১ এবং ২ ব্লক ও জলঙ্গি জুড়ে প্রায় ২২ হাজার একর জমি ওই অরক্ষিত জমি এখন বাংলাদেশিদের বলে দাবি করছেন সে দেশের সীমান্ত ছোঁয়া গ্রামবাসীরা। সীমান্তের বাসিন্দাদের দাবি, বিএসএফের টহলদারি নিয়ে উদাসীনতার জন্যই গত কয়েক মাসে এই অবস্থা হয়েছে। ওই এলাকায় মৎস্যজীবীদের পদ্মায় মাছ ধরাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ করছেন তাঁরা। বিএসএফ অবশ্য সে কথা মানছে না। বহরমপুর রেঞ্জের ডিআইজি কুণাল মজুমদার দাবি, ‘‘ওই এলাকায় নদী-নালার জন্য বর্ষাকালে একটা বড় সমস্যা তৈরি হয় ঠিকই তবে টহল চলছে। শুখা মরসুমে একেবারে সীমান্ত ঘেঁষে আমাদের জওয়ানেরা টহল দিয়ে থাকেন। তবে জল বাড়লে তা কিছুটা সমস্যা হয়।’’ ওই এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় কখনও বা বাংলাদেশিরা অনায়াসে ঢুকে পড়ছে চর উজিয়ে একেবারে সীমান্ত ঘেঁষা ভারতীয় গ্রামগুলিতে। দিন কয়েক আগে দু’জন বাংলাদেশি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতীয় এলাকায় চলে আসায় তাদের আটক করেছিল বিএসএফ। ঘণ্টা কয়েকের মধ্যেই তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে মুক্তিপণ হিসেবে রানিনগর সীমান্তের গ্রাম থেকে দুই গ্রামবাসীকে তুলে নিয়ে যায় বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা। রানিনগরের বাসিন্দা মুজিবর রহমানের দাবি, ‘‘কেবল চাষের মাঠ নয়, পদ্মায় মাছ ধরাও বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে। মেছো নৌকার উপরে রীতিমত দাদাগিরি শুরু করেছে বিজিবি (বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশ)।’’ জলঙ্গির ইরফান আলি বলছেন, ‘‘বিজিবি সব সময়ে বাংলাদেশি গ্রামবাসীদের পাশে থাকে। ঠিক উল্টো ব্যবহারটা করে বিএসএফ, আমরাই যেন অনুপ্রবেশকারী!’’ রানিনগর ২ ব্লকের ১৭ কিমি এলাকা জুড়ে ৯,৬৫৪ একর জমি অরক্ষিত পড়ে আছে সীমান্ত এলাকায়। এমনটাই দাবি করছেন রানিনগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের শাহ আলম সরকার। তিনি বলেন, ‘‘বিএসএফের সঙ্গে কয়েক বছর ধরে দফায় দফায় বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনায় বসেছি। আমরা বিএসএফের কাছে আবেদন জানিয়েছি, সীমান্তের শেষ সীমানায় তাঁরা যেন টহল দেন, না হলে এই অনুপ্রবেশ ক্রমশ বাড়বে।’’