নোটের চোটে জখম সীমান্ত

পাঁচশো ও এক হাজার টাকার নোট বাতিলের আঁচ লাগল সীমান্তেও। নদিয়ার গেদে এলাকায় ক’দিন ধরেই বন্ধ মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র। যার নিট ফল, চিকিৎসার প্রয়োজনে এ পার বাংলায় আসা বাংলাদেশের নাগরিকেরা চরম বিপাকে পড়েছেন।

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস ও সুজাউদ্দিন

গেদে ও ডোমকল শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৩২
Share:

গেদে স্টেশনে বাংলাদেশিদের লাইন। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

পাঁচশো ও এক হাজার টাকার নোট বাতিলের আঁচ লাগল সীমান্তেও।

Advertisement

নদিয়ার গেদে এলাকায় ক’দিন ধরেই বন্ধ মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র। যার নিট ফল, চিকিৎসার প্রয়োজনে এ পার বাংলায় আসা বাংলাদেশের নাগরিকেরা চরম বিপাকে পড়েছেন।

কিডনির সমস্যা নিয়ে অক্টোবর মাসে ভেলোরে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন রাজশাহির বাসিন্দা নইম হাসান। রবিবার গেদে সীমান্তে এসে তাঁর মাথায় হাত। তাঁর কাছে ১৮ হাজার ভারতীয় টাকা ছিল। কিন্তু মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র বন্ধ থাকায় সে টাকা আর বদলাতে পারেননি। পরে অবশ্য ওপার বাংলা থেকে আসা একজনের সঙ্গে তিনি টাকা বদল করতে পেরেছেন। নইম বলছেন, ‘‘খুব বাঁচা বেঁচে গেলাম মশাই। সেই ভেলোর থেকে এই টাকা নিয়ে ভুগছি। ভিন্‌ দেশে এসে যে এমন বেকায়দায় পড়তে হবে, কে জানত!’’

Advertisement

নইম একা নন, তাঁর মতো অনেকেই এ দেশ থেকে ফেরার পথে কিংবা বাংলাদেশ থেকে এ পার বাংলায় এসে এই একই সমস্যায় পড়ছেন। গেদে সীমান্ত দিয়ে এ দেশে এসেছেন বাংলাদেশের ঝিনাইদহের আসাদুজ্জামান ও তাঁর স্ত্রী সাইনুর বিবি। সাইনুর ক্যানসারে ভুগছেন। আসাদুজ্জামান বলছেন, ‘‘ভিসা আগেই পেয়েছিলাম। কিন্তু ভারতে নোট বাতিলের খবর শুনে কিছু দিন দেরি করেই এলাম। কিন্তু এখনও তো সমস্যা মেটেনি। মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রগুলো বন্ধ। কী বিপদ বলুন তো!’’

বাংলাদেশ থেকে এ পার বাংলায় চিকিৎসা করাতে আসা লোকজনের সংখ্যা নেহাত কম নয়। কেউ আসেন ভিসা-পাসপোর্ট করে। কেউ আবার অনুপ্রবেশকারী হয়ে। মুর্শিদাবাদের বেশ কিছু সীমান্ত দিয়ে যাঁরা এতদিন বেআইনি ভাবে এ পারে আসতেন, ৮ নভেম্বরের পরে সেই সংখ্যাটাও কমে গিয়েছে। বাজার মন্দা বেআইনি টিটি (পড়ুন, টাকা ট্রান্সফার) কারবারেও।

সীমান্তের এক টিটি কারবারি বলছেন, ‘‘এক টুকরো সাদা কাগজে লেখা থাকে টাকার অঙ্ক বা কোনও সঙ্কেত। সেই মতো আমরা ও বাংলাদেশের কারবারিরা টাকা দিয়ে দিই। পাচারকারীরা তো বটেই, বহু অসুস্থ মানুষ ও ভিন্ রাজ্যে কাজে যাওয়া শ্রমিকেরাও এ পারে এসে ওই একই কায়দায় ভারতীয় টাকা নিয়ে থাকে। তবে পাঁচশো ও এক হাজার টাকার নোট বাতিলের পরে সে সবই বন্ধ।’’

কিন্তু গেদেতে এ অবস্থা কেন? স্থানীয় মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রের কর্মকর্তা গৌতম নাথ, দীপক মোদক, সঞ্জয় বিশ্বাসদের কথায়, ‘‘সপ্তাহে কমপক্ষে আমাদের তিন লক্ষ টাকা করে প্রয়োজন। সেখানে ব্যাঙ্ক থেকে সপ্তাহে ৫০ হাজার টাকা দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কারবার বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি।” নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট লিড ব্যাঙ্কের ম্যানেজার সুগত লাহিড়ী বলছেন, “চাহিদার তুলনায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে এই জেলায় অনেক কম টাকা ঢুকছে। সেই কারণেই এই সমস্যা। খুব শিগ্‌গির এই সমস্যা মিটে যাবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement