বহরমবপুর প্রশাসনিক ভবনের মোড়। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
একেই বুঝি বলে যন্ত্রের মহিমা!
রাস্তার মোড়ে আগেও ট্রাফিক পুলিশ ছিল। তারা হাত তুলে থামতে বললেও সে সব তোয়াক্কা করতেন না অনেকেই। নিয়ম ভেঙেই মোড় দিয়ে হুশ করে বেরিয়ে যেত গাড়ি। এখন সেই মোড়ের মাথায় স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল বসতেই চেনা ছবিটা ছবিটা বদলে গিয়েছে।
ট্রাফিক সিগন্যালে লালবাতি জ্বলে উঠলেই দাঁড়িয়ে পড়ছে যানবাহন। মোটরবাইক, চার চাকার গাড়ি তো বটেই, থেমে যাচ্ছে নিরীহ সাইকেলও।
মাসখানেক আগেও ট্রাফিক নিয়ম ভাঙাটাই নিয়ম ছিল। তা হলে কোন ম্যাজিকে এমন শৃঙ্খলা ফিরল?
বহরমপুরের বাসিন্দা সৌরভ মণ্ডল বলছেন, ‘‘যন্ত্র বলে কথা! এখন ক্যামেরার যুগ। ট্রাফিক আইন ভাঙলে তো ক্যামেরায় ছবি উঠে যাবে। ফলে যে কোনও সময় সেই ছবি দেখে জরিমানা করতে পারে। পুলিশ আইনি পদক্ষেপ করতে পারে। তাই ভয়েই সকলে নিয়ম মানছেন।’’
মাস খানেক আগেই জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বহরমপুরের সমবায়িকা মোড়ে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল লাগানো হয়। সেখানে সাফল্য আসায় শহরের ওল্ড কালেক্টরেট মোড়েও একই ব্যবস্থা চালু হয়। বুধবার শহরের রানিবাগান মোড় ও পঞ্চাননতলা মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যালের উদ্বোধন হয়েছে।
পুলিশের দাবি, চারটি মোড়েই শহরের লোকজন ট্রাফিক নিয়ম মেনেই চলাচল করছেন। সূত্রের খবর, পরবর্তী সময়ে শহরের বিদ্যাসাগর মোড়, গির্জার মোড়, কান্দি বাসস্ট্যান্ড মোড়, ভাকুড়ি মোড়-সহ মোট ১০টি জায়গায় স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল চালু করা হবে। বহরমপুরের বাসিন্দা সঞ্জয় মণ্ডল বলেন, ‘‘নয়া ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থায় আমরা খুশি। শহরে যান চলাচল আরও মসৃণ হবে।’’
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলছেন, ‘‘আমরা শহরের চারটি মোড়ে পরীক্ষামূলক ভাবে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল লাগিয়েছি। আমরা দেখছি, শহরের লোকজন সেই নিয়ম মেনেই যাতয়াত করছেন। মোড়ে মোড়ে সিসিটিভি রয়েছে। ট্রাফিক পুলিশও থাকছে। আমরা লোকজনকে এখন নিয়ম মেনে চলার জন্য নিয়মিত সচেতন করছি। এর পরে নিয়মভঙ্গ করলে জরিমানাও করা হবে।’’
বহরমপুর শহরের একপাশ দিয়ে চলে গিয়েছে লালগোলা-শিয়ালদহ রেলপথ। আর ওই রেলপথের চারটি জায়গায় লেভেল ক্রসিং পার হয়ে বহরমপুর শহরে ঢুকতে হয়। তার উপরে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগকারী ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক শহরকে আড়াআড়ি ভাবে ভাগ করেছে। ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ঘন ঘন রেলগেট পড়ে। এ ছাড়া জাতীয় সড়কে যানবাহনের চাপ তো রয়েছেই। যার জেরে টোটোর ভিড়ে ঠাসা শহরে নিত্য যানজট লেগেই রয়েছে। এই পরিস্থিতি শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থা আরও মসৃণ করতে মাস খানেক আগে জেলা পুলিশ সমবায়িকা মোড়ে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করেছিল।
পুলিশ সুপার জানাচ্ছেন, পুজোর আগেই শহরের আরও ১০টি জায়গায় একই ব্যবস্থা চালু হবে। এই ব্যবস্থা চালু করার ফলে শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা আরও মসৃণ হবে। এ ছাড়া ট্রাফিক ব্যবস্থা সামাল দিতে পুলিশকর্মীও কম লাগবে।