ধৃত: শামিম আহমেদ। নিজস্ব চিত্র।
অপহরণের গল্প ফেঁদে স্ত্রীকে যে নিজেই খুনের চেষ্টা করেছে শামিম আহমেদ, সোমবার ঘটনার পরেই তা আঁচ করেছিল পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে পুলিশের জেরায় ভেঙে পড়ে সে নিজেই জানিয়ে দিল, ‘‘বিয়েতে মত ছিল না। জোর করে বিয়ে দেওয়ায় খুন করতে গিয়েছিলাম।’’
বুধবার তাকে বহরমপুরে সিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। অন্য, দিকে গুরুতর জখম শামিমের স্ত্রীকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ-তে ভর্তি করানো হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ দিন, মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার বলেন, ‘‘স্ত্রীকে পছন্দ ছিল না বলে ষড়যন্ত্র করে তাঁকে খুনের চেষ্টা করেছিল ওই যুবক। সে কথা স্বীকার নিজেই স্বীকার করেছে শামিম আহমেদ। তার পরেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সাবির আহমেদ নামে অন্য অভিযুক্তের-ও খোঁজ চলছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তরুণীর বাপের বাড়ি কান্দির রামেশ্বরপুরে। তাঁর বাবা এবং শ্বশুরের (শামিমের বাবা) পুরনো বন্ধুত্ব। তাঁরা যৌথভাবে রান্নার গ্যাসের ডিলারশিপ চালান। গোকর্ণে শামিমের একটি মণিহারি দোকান রয়েছে। বছর দেড়েক আগে তাদের বিয়ে হয়। পুলিশি জেরায় শামিম জানায়, প্রথম থেকেই স্ত্রী’কে তার অপছন্দ ছিল। কিন্তু দুই বাড়ির ভাল সম্পর্কের জেরে সে কথা বাড়িতে জানাতে পারেনি। স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করতে না চাইলেও বাড়ির লোক তা মানতে রাজি ছিল না। তাই দিন সাতেক আগে স্ত্রীকে শেষতক খুনের পরিকল্পনা করে সে।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই তরুণী সোমবার বাপের বাড়ি থেকে শামিমের ফোন পেয়ে ভাইয়ের মোটরবাইকে গোকর্ণে পৌঁছন। সেখান থেকে মোটরবাইকে করে কান্দি-বহরমপুর রাজ্য সড়ক ধরে তাঁরা বহরমপুরে যান। বহরমপুরের খাড়গার একটি শপিং মল থেকে বাজার করে মোহনের মোড়ের কাছে পরিচিত এক রেস্তরাঁয় বিরিয়ানি খান বলেও জানা গিয়েছে। তার পর, স্ত্রীর হাতে তুলে দেয় তার পছন্দের আইসক্রিমও। পরিকল্পনা মতো কর্ণসবুর্ণের বাঁকি সেতুর কাছে অপেক্ষা করছিল শামিমের দোকানের কর্মী সাবির আহমেদ। সে জন্যই বহরমপুর-কান্দি মূল সড়ক না ধরে কর্ণসুবর্ণের রাস্তা ধরে সে। জল বিয়োগের নামে বাঁকি সেতুর কাছে গাড়ি থেকে শামিম নামতেই সাবির পিছন থেকে ওই তরুণীকে জাপটে ধরে। শাগরেদের হাতে স্ত্রীকে তুলে দিয়ে বাড়ির পথ ধরে শামিম। আর নির্জন এক মাঠে ওই তরুণীর গলায় নাইলনের দড়ি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে সাবির। তার পর, মারা গিয়েছে ভেবে নয়ানজুলিতে ফেলে দেয়। কাজ শেষ করার পরে শামিমকে ফোন করে সাবির জানায়, ‘অল ক্লিয়ার’। শামিম অবশ্য প্রথম থেকেই বাড়ির লোকজন ও পুলিশকে জানায়, সে প্রস্রাব করতে নামতেই কয়েকজন মদ্যপ দুষ্কৃতী তাঁকে অস্ত্র দেখিয়ে স্ত্রীকে তুলে নিয়ে গিয়েছে। পুলিশ সুপার জানান, ‘‘জেরায় শামিম জানিয়েছিল, স্ত্রীকে খুন করার দৃশ্য দেখতে পারবে না বলে সে ঘটনাস্থল ছেড়ে দ্রুত চলে যায়।’’ ওই তরুণীর দাদা বানি ইস্রাইল বলেন, ‘‘শামিম যে যে এত ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটাতে পারে, এটা আমরা কল্পনা করতেই পারিনি। ওর শাস্তি হোক।’’ অভিযুক্তের বাবা আসরাফুল হক কোনও কথা বলতে চাননি। আদালতে এক কোণায় চুপ করে বসেছিলেন।