নিত্যানন্দকে বহরমপুরে নিয়ে আসার পরে থানায় বসে জেরা করা হয়েছে।
বহরমপুরে একই পরিবারের তিন মহিলা খুনের ঘটনার সূত্র পেতে আমাদের পাঁচ-সাতটা দিন রাতভর কাজ করতে হয়েছিল। তিন জনের একটি তদন্ত টিম গড়ে তোলা হয়েছিল। বিজয়া বসুর মোবাইলে কার ফোন এসেছিল, তার একটা তালিকা করে নিয়েছিলাম প্রথমেই। তাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, ঘটনার রাতে নিত্যানন্দের উপস্থিতির কথা। ৮ জানুয়ারি সকালে তিনটে মোবাইলের মধ্যে বিজয়া বসুর মোবাইলে মেসেজ ঢোকে। মোবাইলের লোকেশন ছিল ইংরেজবাজারের কাছে। নিত্যানন্দের মোবাইলের লোকেশনও পাওয়া গিয়েছিল সেখানে। মোবাইলের লোকেশন ট্র্যাক করে তাকে শিলিগুড়ি থেকে ধরা হয়েছিল। তখনও স্পষ্ট ছিল না নিত্যানন্দ জড়িত কি না।
নিত্যানন্দকে বহরমপুরে নিয়ে আসার পরে থানায় বসে আমরা জেরা করছি। তখনও মাথা ঠান্ডা রেখে একের পর এক যুক্তি সাজিয়ে যাচ্ছিল। যখন যুক্তি সাজাতে পারছে না, অসহায় বোধ করছে, তখনই মুহূর্তের মধ্যে কথা ঘোরানোর সব রকম চেষ্টা ছিল তার। বিজয়া বসুর মোবাইলের সিম নিত্যানন্দের মানিব্যাগ থেকে পাওয়ার পরেই অবশ্য সে ভেঙে পড়েছিল। খুন করার কথা স্বীকার করে নিয়ে ‘ভুল হয়ে গিয়েছে’ বলে জানাতে থাকে।
দাবি ছিল, আসলে চুরিই ছিল তার উদ্দেশ্য। জানায়, জ্যোতিষবিদ্যা ভাল চলছিল না। বহরমপুরে চেম্বার বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভেবেছিল সে। বিজয়া বসুর বাড়িতে সোনার গয়না পাবে ভেবে তা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। সেই পরিকল্পনা মত বাড়ি থেকে আসার সময়ে কড়া ঘুমের ১০টি ট্যাবলেট গুঁড়ো করে নিয়ে এসেছিল এবং যজ্ঞ করার সময়ে সন্দেশের সঙ্গে মেখে খাইয়ে দিয়েছিল। তাতে বিজয়ার পিসি প্রভা দাস এবং বিজয়ার মেয়ে আত্রেয়ী ঘুমে অচৈতন্য হয়ে পড়ে। ঘুম ভাঙেনি। কিন্তু অল্প পরিমাণে ওই প্রসাদ খাওয়ার ফলে আলমারি খোলার সময়ে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল বিজয়ার। তখন তিনি বাধা দেন এবং ‘চোর’ ‘চোর’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। তাতে নিত্যানন্দ ভয় পেয়ে গিয়েছিল। কারণ এর আগে খড়দহতে একটি বাড়িতে ঢুকে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গণপিটুনি খেয়ে হাসপাতালে বেশ কিছু দিন ভর্তি ছিল সে। ফলে বিজয়ার চিৎকারে পাড়া-প্রতিবেশীদের ঘুম ভেঙে গেলে ধরা পড়ে গেলে ফের গণপিটুনির আশঙ্কায় বিজয়ার গলা টিপে ধরে। ততক্ষণে বিজয়া বাথরুমে জানালার কাছে গিয়ে চিৎকার করার চেষ্টা করেছিল। তখন বিজয়াকে বাথরুমের মধ্যে ফেলে গলা টিপে ধরে মাথা পিছন দিক ঠুকে দেওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যে নিস্তেজ হয়ে যাওয়ার কথা নিত্যানন্দ জানিয়েছিল। তখন ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে বাকি দুজনকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছিল বলেও জানিয়েছিল।
আসলে বিজয়া বসুর মোবাইল সিম-সহ বিক্রি করে দিয়েছিল শিলিগুড়ির হংকং মার্কেটে। কিন্তু দোকান মালিক সিম ফেরত দিয়েছিল। ওটা ভেঙে ফেললে হয়তো নিত্যানন্দ যে আসল খুনি তা বুঝতে আরও সময় লাগত। কিন্তু টেনশনে ছিল বলে ভুলে গিয়েছিল ভেঙে ফেলতে। ওই সিম ভেঙে না ফেলায় নিত্যানন্দ নিজেই তার কফিনে শেষ পেরেক পুঁতেছিল।