ভাঙচুর হওয়া সেই গাড়ি। ডান দিকে, থানার সামনে ধর্নায় বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
তিনি রাসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রাজ্যপালের সঙ্গে এক মঞ্চে ছিলেন। রাজ্যপালের পায়ে হাত দিয়ে প্রণামও করেছেন। তার পরেই শান্তিপুরের তৃণমূল বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যকে সমালোচনায় বিদ্ধ করেছিলেন দলের একাংশ। শানানো ভাষায় তাঁর নিন্দায় সরব হয়েছিলেন তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠিক জেলার সভাপতি শঙ্কর সিংহ। অরিন্দম বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন এমন জল্পনাও তীব্র হয়েছিল।
ঠিক তার পরেই বৃহস্পতিবার ভোররাতে শান্তিপুরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে রামনগর তোপখানাপাড়ায় অরিন্দম-ঘনিষ্ঠ দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে বোমা মারে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা। সেখান থেকে কিছুটা দূরে তামাচিকাপাড়া এলাকায় অরিন্দমের ভাড়া বাড়ির কাছে রাখা ছিল তাঁর গাড়িটি। সেই গাড়ির কাচও কেউ বা কারা ভেঙে দেয়।
হয়তো সমাপতন কিন্তু অনেকেই একে রাজ্যপালের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জের বলে মনে করছেন। রাজনৈতিক মহলের খবর, তৃণমূলের অন্দরেই অরিন্দম-বিরোধী একটি গোষ্ঠী রয়েছে। খোদ শঙ্কর সিংহ রাজ্যপাল ইস্যুতে অরিন্দমের বিরুদ্ধে মুখ খোলার পর সেই গোষ্ঠীই আরও এক ধাপ এগিয়ে আক্রমণের পথে গিয়েছে। এই তত্ত্বকে আরও উস্কে দিয়েছে অরিন্দমের খানিক ধোঁয়াশা রেখে দেওয়া বক্তব্য। তাঁর কথায়, “এর আগেও আমার উপরে হামলা হয়েছে। কারা করেছে মানুষ জানেন। এর জবাব আগেও তাঁরা দিয়েছেন,
ভবিষ্যতেও দেবেন।’’
অনেকেরই মত, অরিন্দম চাইলে সরাসরি বিজেপির নাম করে অভিযোগ করতে পারতেন, কিন্তু তা করেননি। উল্টে নিজে শাসক দলের বিধায়ক হয়েও এ দিন পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে শান্তিপুর থানায় ধর্না বসেন। পুলিশ সরাসরি দেখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে, এই ঘটনাও আলোড়ন ফেলেছে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে। অরিন্দম এ দিন মন্তব্য করেন, ‘‘বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু ঘটনা ঘটছে। পুলিশি পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।” শাসকদলের বিধায়ক পুলিশের সমালোচনা করে ধর্নায় বসছেন এমন নজিরও বিরল।
যদিও এ দিন কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে বিধায়ক জানিয়েছেন, শান্তিপুরে রাস উৎসব সেই কারণে তাঁরা আজ শুক্রবার অভিযোগ জমা দেবেন। রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার ভিএসআর অনন্তনাগ বৃহস্পতিবার বলেছেন, “আমরা কোনও অভিযোগ এখনো পাইনি। পুলিশ পুলিশের কাজ ঠিকঠাকই করছে।” দলের অন্দরে শান্তিপুরের পুরপ্রধান অজয় দে-র সঙ্গে অরিন্দমের মতবিরোধ সর্বজনবিদিত। সেই অজয় দে এ দিন বলেন, ‘‘ পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত করুক। তাহলেই রহস্য উদ্ঘাটিত হবে।”